মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৭

।। জেলখানার জিন্দেগী।।

জেলখানায় হাজতিদের লগে দুইভাবে দেখা করা যায় ।

এক। সরকারি ভাবে ।
দুই । ভিআইপি মর্যাদায় ।

সরকারি ভাবে দেখা করতে হলে আপনাকে সকাল আট টা থেকে বিকাল পাঁচটার আগে স্লিপ কাটতে হবে । কার সাথে দেখা করতে চান তার নাম তার বাবার নাম সে কোন ওয়ার্ডে থাকে- এই তথ্য গুলো দিয়ে । এইটা বিনামূল্যে হলেও কিছু টাকা দিতে হয় যারা স্লিপ লেখে তাদেরকে ।

স্লিপ কাটার পর আপনি একটা ঘরের ভিতরে অপেক্ষা করবেন । স্লিপ ভিতরে চলে গেলে ওয়ার্ড থেকে সেই লোকটিকে ডেকে আনা হবে আপনি যার সাথে সাক্ষাৎ করতে চান । সে এসে খাঁচার ভেতর থেকে আপনার সাথে কথা বলবে আর আপনি খাঁচার বাইর থেকে কথা বলবেন । অনেক লোকজন থাকে বেশ চিল্লায় চিল্লায় কথা বলতে হয় । অনেক ভিড় থাকে । একজন কি বলছে আরেকজন তা অনেক সময় শুনতেও পায় না । বেশ কয়েকবার চিল্লায় চিল্লায় বলতে হয় ।

ভিআইপি ভাবে দেখা করতে হলে আপনাকে সকাল আটটা থেকে বিকাল পাঁচটার আগে ভিআইপি স্লিপ কাটতে হবে । কার সাথে দেখা করতে চান তার নাম তার বাবার নাম সে কোন ওয়ার্ডে থাকে- এই তথ্য গুলো দিয়ে । এই জন্য আপনার থেকে তেরশো টাকা দিতে হবে ।

স্লিপ কাটার পর আপনি বাইরে অপেক্ষ করবেন । স্লিপ ভিতরে চলে গেলে ওয়ার্ড থেকে সেই লোকটিকে ডেকে আনা হবে আপনি যার সাথে দেখা করতে চান । তারপর আপনাকে ভিতরে ঢুকানো হবে । ঢুকানোর পর আপনার হাতে একটা সিল দিয়ে দিবে । এই সিল হচ্ছে চিহ্ন । আপনি দেখা করতে এসেছেন । আর যার সাথে দেখা করতে এসেছেন তার হাতে একটা কলম দিয়ে একজন সাইন করে দিবে । সাইনের এর প্রমাণ হইলো এই লোক হাজতি । তারপর আপনারা সামনা সামনি মুখোমুখি হয়ে কথা বলতে পারবেন বিশ মিনিট । বিশ মিনিট শেষে সিল মারা লোকটিকে বের করে দিবে আর সাইন দেওয়া লোকটিকে ভিতরে ঢুকিয়ে দিবে ।

দেখা করতে এসে অনেকেই হাজতিদের টাকা দেয় । ভিআইপি ভাবে দেখা করতে এসে টাকা দিলে হাজতিকে ভিতরে ঢুকলেই একশো টাকা দিয়ে দিতে হবে জেলখানার জমাদারকে । নইলে সে সব টাকা নিয়ে ফেলবে চেক করে । এই চেক মানে পাছার জোরা পর্যন্ত চেক করে । টাকা একশো দিয়ে দিলে কতো টাকা দিলো তা আর দেখে না । আর যে আপনাকে ডেকে আনছে তাকে দিতে হবে পঞ্চাশ টাকা ।

আর যদি সরকারি ভাবে দেখা করতে এসে টাকা দেয় তাইলে হাজারে একশো টাকা করে দিয়ে দিতে হবে ।

জেলখানায় ক্যাশ টাকা অবৈধ । কিন্তু ক্যাশ টাকা ছাড়া জেলখানায় চলায় যায় না ! কি অদ্ভুদ না !

জেলখানায় কারো সাথে দেখা করতে আসলে অবশ্যই হাতে মিনিমাম তিন ঘণ্টার সময় নিয়ে আসবেন । কারণ এইখানে নিয়মের তোয়াক্কা সব সময় ঠিক থাকে না । একেক সময় একেক রকম হই যায় !

জেলখানায় কারো সাথে কেউ দেখা করতে আসলে তাকে বলা হয় "দেখা আসছে" । কোন হাজতি যদি একবার দেখা করতে যায় কারো সাথে সেটা সরকারি হোক আর ভিআইপি হোক হাজতিকে অবশ্যই ওয়ার্ডের একজন চেয়ারম্যান আছে যার কাজ হচ্ছে টয়লেট আর ওয়ার্ড পরিস্কার রাখা এবং পানি টানা । তাকে এক বান্ডিল বিড়ি দিয়ে দিতে হবে এবং সেইদিনের লক আপ দিতে হবে পঞ্চাশ টাকা । দেখা করতে এসে হাজতিকে টাকা দিক আর না দিক । বিড়ি আর লক আপের পঞ্চাশটাকা হাজতিকে দিয়ে দিতেই হবে ।

দিতে না পারলে হাজতি বুঝে মাইর নইলে মা বোন তুইলা গালি ! লক আপ মানে হইলো সকালে ওয়ার্ডের দরজা খুইলা দেওয়া আর বিকালে দরজা বাইন্ধা দেওয়া । জেলখানার একজন মিয়াসাব এই কাজটা করেন । তাকে দৈনিক পঞ্চাশটাকা করে দিয়ে দিতে হয় । এইটাকেই বলে লক আপ দেওয়া । মেট এই টাকাটা যারা দেখা করতে যায় মানে যাদের লগে দেখা করতে লোক আসে তাদের থেকে নিয়ে দে ।

তাই যারা হাজতিদের সাথে দেখা করতে যাবেন তারা অবশ্যই চেষ্টা করবেন হাজতিদের হাতে কিছু টাকা পয়সা দিয়ে আসতে । হাজতিরাও দেখা করতে যায় কিছু টাকা পয়সা আর মামলার অগ্রগতি জানার আশায় ।

জেলখানার জিন্দেগী বড়ই নির্মম এবং নির্দয় । টাকা আছেতো ভালো টাকা নাইতো কষ্ট কষ্ট এবং অবর্ননীয় কষ্ট !

নুরুল আজিম রণি একজন অপ্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রলীগ নেতার নাম ।

এই মূহুর্তে গোটা বাঙলাদেশের মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক চেতনা এবং জাতির পিতার আদর্শ কায়েমে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রলীগ নেতার নাম নুরুল আজিম রণি ।

রণি যখন রাজনীতি শুরু করেছিলো তখন আওয়ামীলীগের এতো সুসময় ছিলো না । চারদিকে বিএনপি জামাতের দুর্নীতি , খুন , ধর্ষণ , সংখ্যালগুদের উপর হামলা , লুটপাট , অগ্নিসংযোগ এবং আওয়ামী অনুসারী নেতা কর্মী সমর্থকদের উপর হামলা মামলা ছিলো নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা ।

বিএনপি জামাত ক্ষমতা ছাড়ার পর পর যখন জাতির উপরে চেপে বসলো সেনা সমর্থিত মঈনউদ্দিন ফখরুদ্দিনের সরকার তখন দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্টানের ছাত্ররাজনীতিসহ সকল ধরনের রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হলো ।

ঠিক সেই সময়ে মুক্তিযুদ্ধের ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক চেতনা এবং জাতির পিতার আদর্শ কায়েমে শপথ নেওয়া রণি ছিলো রাজপথের একজন নিয়মিত আন্দোলন কর্মী ।

তৎকালীন সময়ে এমন কোন আওয়ামীলীগ যুবলীগ ছাত্রলীগের রাজনৈতিক কর্মসুচি ছিলো না যেখানে রণি উপস্থিত থাকতো না । একদিকে পুলিশের লাঠি চার্জ অন্যদিকে , মামলা হামলার ভয় কোনটায় রণি'কে রাজপথের আন্দোলন সংগ্রাম থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারে নাই । আমার মনে হয় সেসময় রণি কখনো মনে করে নাই সে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হবে । অথবা সে কোন পদ পদবীর লোভে বাঙলাদেশের অত্যন্ত দুঃসময়ে এইসব আন্দোলন সংগ্রাম করছে । আমার মনে হয় তার রাজনৈতিক নীতি চেতনা আদর্শ এবং সততা তাকে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ পাইতে সাহায্য করেছে ।

কিন্তু রণি মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর পর তার রাজনৈতিক শত্রু বাড়তে লাগলো । যার কোন শত্রু ছিলো না এখন তার শত্রুর সংখ্যা অগনিত । আমি যতদুর জানি সে ক্ষমতার অপব্যবহার করে কারো কাছে চাঁদা চায় নাই । কারো জমি দখল করে নাই । এমনকি কাউকে মার্ডারও করে নাই । তাইলে তার এতো শত্রু কেনো চারপাশে ?

আমার কাছে মনে হয়েছে রণি রাজনৈতিক নীতি, চেতনা এবং আদর্শের উপর সৎ বলেই তার এতো শত্রু । আসুন কিছু কারণ খুঁজি নুরুল আজিম রণির এতো শত্রু কেনো ।

এক।
রণি মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পরপর তার ফেইসবুক টাইমলাইনে নিয়মিত মুক্তিযুদ্ধের ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক চেতনা এবং জাতির পিতার আদর্শ কায়েমে তার চিন্তা বিবেক বুদ্ধি এবং বোধশক্তিকে কাজে লাগিয়ে নয়া প্রজন্মের মগজ দখল করার জন্য লেখালেখি শুরু করে অবিরামভাবে । এইসব লেখা পড়ে প্রচুর ছেলে মেয়ে মুক্তিযুদ্ধের ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক চেতনা এবং জাতির পিতার আদর্শে অনুপ্রানিত হতে লাগলো । এবং এই জন্য উগ্রধর্মান্ধ জনগুষ্টির কাছে রণি হয়ে উঠলো একজন শত্রু ।

দুই।
প্রায় পচিশ বছর ধরে চট্টগ্রাম কলেজ এবং মহসিন কলেজ একাত্তরের ঘাতক দালাল রাজাকার যুদ্ধাপরাধী জামাত শিবির এবং উগ্রধর্মান্ধদের দখলে ছিলো । স্থানীয় নেতার সমন্বয়ে কোন লাশ ছাড়াই রণি নিজের বিবেক বুদ্ধি এবং কৌশল কাজে লাগিয়ে চট্টগ্রাম কলেজ এবং মহসিন কলেজ ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক চেতনা এবং জাতির পিতার আদর্শ কায়েমসহ সকল প্রগতীশীল ছাত্রছাত্রীদের জন্য এই দুই কলেজকে অভয়ারণ্য করে দিলো । আর ক্ষমতার একক ভাগ পাইতে স্থানীয় নেতা কর্মী সমর্থকরা রণির শত্রু হয়ে গেলো ।

তিন।
সকল ছাত্রছাত্রীদের জন্য বাস ভাড়া হাফ করার দাবীতে রণির আন্দোলনের কারনে এবং মুসলিম হাই স্কুলের মাঠ থেকে বাস ষ্ট্যান্ড সরিয়ে ছাত্রদের নিরাপদ খেলার মাঠ উপহার দেওয়ার জন্য বাস মালিক সমতির কাছে রণি হয়ে উঠলো একজন শত্রু ।

চার।
চট্টগ্রাম শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্টানগুলো ছাত্র ছাত্রীদের বোর্ড নির্ধারিত ফি'র চাইতে অতিরিক্ত ফি আদায়ের প্রতিবাদে রণির আন্দোলনের ডাকে সমস্থ ছাত্রছাত্রী এবং তাদের অভিভাবক সংহতি প্রকাশ করায় শিক্ষাপ্রতিষ্টানগুলো বাধ্য হয় অতিরিক্ত আদায়কৃত ফি ফেরত দিতে । এবং সেইসব শিক্ষাপ্রতিষ্টানের পরিচালকদের কাছে রণি হয়ে গেলো শত্রু ।

পাঁচ ।
চট্টগ্রামে আউটার স্টেডিয়ামে খেলার মাঠ দখল করে সুইমিংপুল বানানোর প্রতিবাদ , চট্টগ্রামে জলবদ্ধতা নিরসনে কতৃপক্ষের দিকে আঙ্গুল তুলে রণির নিয়মিত লেখালেখির কারণে সে হয়ে উঠে তার দলের ফায়দাবাজ পলিটিশিয়ানদের শত্রু ।

ছয়।
বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগ যুবলীগের নেতা কর্মী খুন হওয়ার পর বিচার না হওয়ার অপসংস্কৃতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরে এবং খুনের সাথে জড়িত নেতা কর্মী সমর্থকদের সরাসরি প্রকাশ্যে বিরোধিতা করায় রণি হয়ে উঠে সেইসব নেতার কর্মী সমর্থকদের শত্রু ।

সাত।
আওয়ামীলীগে একাত্তরের রাজাকার যুদ্ধাপরাধী জামাত শিবির থেকে আমদানিকৃত নেতাদের রণি সমর্থন না দিয়ে তথ্য উপাত্থ্য দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করায় রণি হয়েছে তাদের শত্রু ।

আট।
রণি একাত্তরের সকল ঘাতক দালাল রাজাকার যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড চায় এবং এই দেশে উগ্রধর্মান্ধ জনগুষ্টির বিরুদ্ধে ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক চেতনা এবং জাতির পিতার আদর্শ দিয়ে তাদের পরাস্থ করে নয়া প্রজন্মের মগজে অসাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করে দিতে চায় । এই জন্যে সে ঘাতক দালাল এবং উগ্রধর্মান্ধদের চির শত্রু ।

এইরকম আরো অসংখ্য কারণ আছে মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রণি'র শত্রু বাড়ার ।

তবে আমার কাছে মনে হয় ব্যাক্তিগত ফায়দা বা সামাজিক সম্মান হাসিল করার জন্য রণি'র শত্রু বাড়ে নাই । রণি'র শত্রু বেড়েছে সে মুক্তিযুদ্ধের ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক চেতনা এবং জাতির পিতার আদর্শের সাথে কোন রকম আপোষ-রফা করে নাই এই জন্য ।

রণি আমার দেখা সমসাময়িক ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক চেতনা এবং জাতির পিতার আদর্শ কায়েমে একজন অপ্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রলীগ নেতার নাম ।

নুরুল আজিম রণি'র জন্য ভালোবাসা
নুরুল আজিম রণি'র জন্য শুভ কামনা ।

জয় বাঙলা
জয় বঙ্গবন্ধু ।

বৃহস্পতিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৭

বন্ধু হিন্দুও হলেও ভালোবাসবো শত্রু মুসলমান হলেও ঘৃণা করবো ।

খালেদা জিয়া তার নেতা কর্মী এবং সমর্থকদের নির্দেশ দিয়েছে , তারা যেনো আর ভারতের প্রতি বিদ্বেষমূলক বক্তব্য না দেয় এবং এইদেশে ভারতের প্রতি বিদ্বেষ না ছড়ায় ।

আমার কাছে মনে হয়েছে , খালেদা জিয়া নীতি, সততা, কৃতজ্ঞতা এবং আদর্শের উপর ভিত্তি করে বিএনপির নেতা কর্মী এবং সমর্থকদের এই নির্দেশ দে নাই । এই নির্দেশ দিয়েছে একটা কৌশলগত কারনে । খালেদা জিয়া মনে করে , এই বাঙলাদেশে ভারতের ইশারা ছাড়া সরকার পরিবর্তন হয়না । বিএনপির নেতা কর্মীরা যদি এই মুহুর্তে ভারতের প্রতি বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দেয় তাহলে আগামী নির্বাচনে ভারত বিএনপি’কে সাহায্য সহযোগিতা করবে না । তাই খালেদা জিয়া বিএনপির নেতা কর্মী সমর্থকদেরকে কৌশলগত কারনে ভারতের প্রতি বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দিতে নিষেধ করেছে ।

এই বাঙলাদেশে ভারতের প্রতি বিদ্বেষমূলক কথাবার্তা যারা বলে তাদেরকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় । তাদের এক ভাগ মনে করে , ভারত হিন্দু রাষ্ট্র আর বাঙলাদেশ মুসলমান রাষ্ট্র । একজন মুসলমান হয়ে একটি হিন্দু রাষ্ট্রকে কোন ভাবেই সমর্থন করা যায় না । তাই তারা শুধুমাত্র ধর্মীয় গোঁড়াময় আবেগ অনুভুতি থেকে ভারতের প্রতি বিদ্বেষমূলক কথাবার্তা বলে । আরেকভাগ মনে করে , ভারত বাঙলাদেশের ব্যবসা বানিজ্য, শিল্প সাহিত্য, মানুষের আচার আচরণসহ সংস্কৃতির সকল শাখায় আগ্রাসন চালাচ্ছে । তাই তারা ভারতের প্রতি বিদ্বেষমূলক কথাবার্তা বলে ।

কিন্তু এই দুই ভাগের একভাগও মনে রাখে নাই , বাঙলাদেশের জন্মযুদ্ধে ভারতের অবদান । ভারত বাঙলাদেশের জন্য কি কি করেছে । পৃথিবীর একটি দেশ আরেকটি দেশের স্বাধীনতা এনে দেওয়ার জন্য এতো ত্যাগ স্বীকার করেছে কি না আমার জানা নাই ভারতের মতো । এক কোটি মানুষকে থাকতে দিছে । নয় মাস ধরে খাওয়াইছে । চিকিৎসা দিছে । মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র দিছে । গোলাবারুদ দিছে । ট্রেনিং দিছে । বাঙলার মানষের মুক্তির জন্য ভারতের প্রায় চারহাজার সন্য জীবন দিছে এবং আন্তর্জাতিক ভাবে পাকিস্তানের উপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য ইন্দিরাগান্ধী বিশ্বসফর করছে । বাঙলাদেশের জন্মযুদ্ধে ভারত যে মানবিকতা এবং বন্ধুর পরিচয় দিছে এই দেশের জনগনের প্রতি তা একজন বাঙালি হয়ে অস্বীকার করলে নিশ্চয় বাঙালির ইজ্জত বাড়বে না !

জন্মযুদ্ধে পরাজিত হওয়া শক্তি ঘাতক দালাল রাজাকার যুদ্ধাপরাধী জামাতিরা ভারতের এই সাহায্য সহযোগিতা মেনে নিতে পারে নাই । তাই তারা একাত্তরেও এই দেশে অপপ্রচার চালাইছিলো পাকিস্তানীদের পক্ষ হয়ে । তারা বলতো, পাকিস্তান মুসলমান রাষ্ট্র এবং বাঙালিদের বেশির ভাগও মুসলমান । ভাইয়ে ভাইয়ে যুদ্ধ করার কোন দরকার নাই । দেশ স্বাধীন হওয়ারও কোন দরকার নাই । যারা দেশের স্বাধীনতা চায়, যারা দেশ ভাগ চায় তারা ভারতের দালাল তারা মুসলমান না । আর ভারতের দালাল মানে হিন্দুদের দালাল ।

ঘাতক দালাল রাজাকার যুদ্ধাপরাধীদের এই যে দেশপ্রেমহীন ধর্মীয় গোঁড়াময় অপরাজনীতি তা তারা স্বাধীনতা পরবর্তী ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক বাঙলাদেশেও ছড়িয়ে দিচ্ছে । তারা ভারতের প্রতি বিদ্বেষ ছড়িয়ে এই দেশের মানুষের ভেতর পাকিস্তানের প্রতি প্রেম ভালোবাসা জাগিয়ে তুলতে চায় । জন্ম দিতে চায় ধর্মভিত্তিক পশ্চাৎপদ একটি রাষ্ট্রের । আর তাতে পানি দিচ্ছে এই দেশের বিএনপি ।

এইদেশে বিএনপি হলো জন্মযুদ্ধে পরাজিত শক্তি ঘাতক দালাল রাজাকার যুদ্ধাপরাধী জামাতিদের রক্ষাকবচ । তাই বিএনপি জামাতিদের পক্ষ হয়ে জামাতিদের ফায়দা দেওয়ার জন্য এই দেশে ভারত বিদ্বেষ ছড়িয়ে হিন্দু মুসলমান ইস্যুটিকে জিইয়ে রাখে । এই বিএনপির জন্যই মুক্তিযুদ্ধের ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাঙলাদেশ গড়া সম্ভব হচ্ছে না ।

বন্ধু হিন্দুও হলেও ভালোবাসবো
শত্রু মুসলমান হলেও ঘৃণা করবো ।
ভারত হিন্দু হলেও বাঙলাদেশের বন্ধু
পাকিস্তান মুসলমান হলেও বাঙলাদেশের শত্রু ।
ভারতকে ভালোবাসি
পাকিস্তানকে ঘৃণা করি ।

জয় বাঙলা ।

বুধবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৭

।। তানিয়া ও জিনিয়ার গল্প ।।

তারা দুই বান্ধবী । মফস্বলের একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে শহরে এসেছে অনার্সে পড়তে । থাকে মেসে । তারা কয়েকজন কলেজ ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া মেয়ে মিলে একটা বিল্ডিংযে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছে । সেখানের একটা রুমে তানিয়া আর জিনিয়া থাকে ।
তারা দুইজনই খুবই সংস্কৃতিমনা । মফস্বলে থাকতে তারা টেলিভিশনে নাটক সিনেমা দেখতো আর রেডিওতে গান শুনতো । টেলিভিশনে শাবানা আর শাবনুরের অভিনয় দেখে তাদের ভিতর অভিনয়ের বাসনা জাগে । গ্রামেতো আর অভিনয়ের তেমন কোন সুযোগ সুবিধা নাই তাই তারা শহরে এসে অভিনয়ের ব্যাপারে খোঁজ খবর নেয় ।
তানিয়া খুবই শান্ত প্রকৃতির মেয়ে । আর জিনিয়া একটু চটপটে স্বভাবের । একদিন তারা দুইজন শিল্পকলা একাডেমিতে এসে অভিনয়ের ব্যাপারে ধারনা নিয়ে যায় । তারা জানতে পারে , শিল্পকলায় বিভিন্ন থিয়েটার গ্রুপ আছে যারা অভিনয় শেখায় । সেখানে ভর্তি হলেই তারা অভিনয় শিখতে পারবে এবং তারাও আস্তে আস্তে শাবানা শাবনুরের মতো দেশ কাঁপানো অভিনয় শিল্পী হয়ে উঠতে পারবে ।
জিনিয়া বুঝতে পারে , এইভাবে অভিনয় শিখে অভিনয় শিল্পী হতে হতে তার জীবন শেষ হয়ে গেলেও তাকে কেউই চিনবে না শুধুমাত্র শিল্পকলায় আসা থিয়েটারপ্রেমীরা ছাড়া । তাকে আরো কোন সহজ এবং সরল পথ খুঁজে বের করতে হবে । যাতে সে তাড়াতাড়ি সিনেমার নায়িক হয়ে উঠতে পারে ।
তানিয়া শিল্পকলার একটা থিয়েটার গ্রুপের ফরম কিনে তাদের সদস্য হয় । আর জিনিয়া সহজ ও সরল পথ খুঁজতে থাকে । তানিয়া থিয়েটারে ভর্তি হওয়ার পর থাকে একটা নাটকের স্ক্রিপ্ট দেওয়া হয় । সেখানে তার চরিত্রটি হচ্ছে, কেন্দ্রীয় চরিত্রের ছোট বোন । তাকে বলা হয় , নাটকের প্রত্যেকটি চরিত্র এবং সংলাপ খুব ভালো ভাবে পড়তে এবং বুঝতে । আর উচ্চারণের ব্যাপারটিও যেনো খুবই শুদ্ধ এবং সাবলীল হয় ।
প্রত্যেকদিন তানিয়া এবং জিনিয়া কলেজের ক্লাস শেষ করে রুমে আসে । রুমের প্রয়োজনীয় কাজ সেরে জিনিয়া ঘুমিয়ে পড়ে আর তানিয়া স্ক্রিপ্ট মুখস্থ করতে থাকে আর আয়নার সামনে প্র্যাকটিস করে । আর শুক্রবারে একদিন শিল্পকলায় যায় এবং সেখানে গ্রুপের সদস্যদের সাথে খুবই মনোযোগ দিয়ে রিহার্সেল করে । তানিয়া যখন রিহার্সেল করে তখন জিনিয়া শিল্পকলার বাইরে ঘুরতে থাকে । আর সে বুঝতে চেষ্টা করে শিল্পকলার পরিবেশ পরিস্থিতি ।
জিনিয়া দেখতে পায় শিল্পকলার বাইরে ছেলেপেলেদের ছোট ছোট বেশ কয়েকটি গ্রুপ আছে । তাদের কেউ কেউ বন্ধু বান্ধব নিয়ে আড্ডা মারছে , কেউ ফুটপাতের পাশে বসে বিড়ি গাঁজা টানছে , আবার কেউ গোল হয়ে বসে গান বাজনা করছে ।
জিনিয়া চিন্তা করলো , তাকে এমন একটি গ্রুপ খুঁজে বের করতে হবে যে গ্রুপে মিশে গেলে তার সাথে মিডিয়ার কারো না কারো সাথে পরিচয় হবে । যে গ্রুপটি গান বাজনা করছে তাদের একজনকে গিয়ে বলে, ভাইয়া আমি কি বসতে পারি আপনাদের সাথে? সে বলে, অবশ্যই । বসে পড়ুন আর গান শুনতে থাকুন । জিনিয়া সেদিন তানিয়ার রিহার্সেল শেষ না হওয়া পর্যন্ত গান বাজনা শুনেছে । আর দুই একটান বিড়ি টেনেছে । জিনিয়া জানে বিড়ি খুব দ্রুত গ্রুপের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি করতে সাহায্য করে ।
পরের সাপ্তাহেও তানিয়া রিহার্সেল করতে চলে গেলো আর জিনিয়া রাস্তায় ফুটপাতে বসে পুরনো গ্রুপের সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে । গ্রুপের মধ্যে একজন ছেলে আসছে যার ক্যামেরা আছে । সে গ্রুপের আড্ডার ছবি তুলছে । আর সে ছবি তোলার পর বসেছে জিনিয়ার পাশে । জিনিয়াকে ছবি কেমন হয়েছে তা ক্যামারার মনিটরে দেখাচ্ছে । জিনিয়া নিজের ছবি ক্যামেরায় দেখে বেশ মুগ্ধ । আসলেই সে অনেক সুন্দর । সে ছেলেটিকে বললো, ভাইয়া আপনি কি ছবি গুলো আমার ফেইসবুকে ইনবক্স করতে পারবেন? ছেলেটি বললো , অবশ্যই ।
ছেলেটি জিনিয়ার ফেইসবুক আইডিটি নিয়ে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট পাঠিয়ে দিলো । আর বললো, ফোন নাম্বারটি দিতে । জিনিয়া ছেলেটিকে ফোন নাম্বার দিলো । আর ছেলেটি ফোন নাম্বার সেইভ করে একটা মিস কল দিলো । জিনিয়া জিজ্ঞাস করলো, ভাইয়া আপনার নামটা , ছেলেটি বললো, তানভীর । জিনিয়া নাম্বারটা সেভ করে বলল, ভাইয়া আপনি ছবিগুলো ইনবক্স করে আমাকে একটা ফোন দিয়েন । ছেলেটি বললো , অবশ্যই ।
তানিয়া রিহার্সেল থেকে বের হয়ে জিনিয়ার কাছে এসে বললো , এই চল আমার রিহার্সেল শেষ । আমাকে তোকে নিয়ে ফটোকপির দোকানে যেতে হবে । কিছু কাজ আছে । জিনিয়া গ্রুপের সবাইকে টা টা বলে উঠে গেলো ।
জিনিয়া জিজ্ঞাস করলো তানিয়াকে, এই রিহার্সেল কেমন চলছে । তানিয়া বললো, বেশ কঠিনরে । মনে করেছিলাম অভিনয় খুবই সহজ এবং সরল কিন্তু এখন মনে হচ্ছে । অভিনয় আসলে বিশাল একটা ব্যাপার । থিয়েটারে না ঢুকলে বুঝতেই পারতাম না ।
জিনিয়া বলে , আজ এতোদিন হয়ে গেলো তোর নাটক আসলে মঞ্চস্থ হবে কবে ? জিনিয়া মুখ ভেঙচিয়ে বলে , এতো সহজ অভিনয় ! আগে স্ক্রিপ্ট মুখস্থ করো তারপর ডায়লগ ডেলিভারি প্র্যাকটিস করো তারপর এক্সপ্রেশন আরো কতো কি ! জিনিয়া বলে, তো নাটক মঞ্চস্থ হবে কবে ? তানিয়া বলে, সে অনেক দেরি । আমার কথা বাদ দে তোর কথা বল । জিনিয়া বলে , আমি শর্টকার্ট লাইন খুঁজতাছি । তানিয়া বলে, পাওয়া গেছে তোর শর্টকার্ট লাইন । জিনিয়া বলে, হু ।
রাতের বেলায় জিনিয়ার মোবাইলটা কেঁপে উঠলো । স্ক্রিনে নাম দেখে তানভীর । সে ফোনটা ধরে বলে, হ্যালো । ওপাশ থেকে তানভীর বলে , হ্যালো কিউটি বেবি তোমার ছবি ইনবক্স করে দিয়েছি । দেখো তারপর আমায় জানাও । ফোনের লাইন কেটে জিনিয়া ফেইসবুক ইনবক্স চেক করে । দেখে ছবিগুলোতে থাকে খুবই সুন্দর লাগছে । সে নিজের ছবি দেখে নিজেই মুগ্ধ । সাথে সাথে ডাউনলোড করে সে ফেইসবুকে আপলোড দিয়ে দিলো । ছবির ক্যাপশন লিখলো , কিউটি বেবি !
ফোন দিলো তানভীরকে । তানভীর ফোন রিসিভ করেই বললো, এতো দেরি কেনো ? জিনিয়া বললো, ভাইয়া ফেইসবুকে ছবি আপলোড করে তারপর আপনাকে ফোন দিয়েছি । তানভীর বললো, নো ভাইয়া আর নো আপনি । অনলি তানভীর আর অনলি তুমি ডাকবে । জিনিয়া বললো , ওহ তাই ! তানভীর বললো, হুম তাই’ই । তানভীর বললো, কাল তুমি ফ্রি আছো ? জিনিয়া বললো , হ্যাঁ ফ্রি আছি । সে বললো , কাল তুমি সমুদ্র পাড়ে এসো তোমার কিছু ফ্যাশন ফটোগ্রাফি করে দিবো । জিনিয়া বললো , ওহ রিয়েলি ! আমি খুবই এক্সাইটেট ! তানভীর বললো, এর চাইতে আরো বেশি এক্সাইটমেন্ট অপেক্ষা করছে তোমার জন্য যদি আমার সাথে ইজি গোয়িং একটা সম্পর্ক তৈরি করো । জিনিয়া বললো , তানভীর আমি তোমার সাথে খুবই ইজি । নো প্রবলেম ।
কথা শেষ হওয়ার পর , জিনিয়া ফেইসবুকে ঢুকে দেখলো এক ঘন্টায় তার লাইক পড়েছে তিনশো চুয়াল্লিশটা ! কমেন্টস একশো চারটা ! ইনবক্সে মেসেজ সাতান্নটা ! জিনিয়া পুরাই শকড ! যার আগে লাইকের সংখ্যা থাকতো সত্তর থেকে আশিটা সেখানে এতো লাইক এতো কমেন্টস এতো ইনবক্স ! জিনিয়া ভাবতেই পারছে না !
জিনিয়াকে অনেকেই ইনবক্সে অফার করেছে । মিউজিক ভিডিও, নাটক এবং শর্টফিল্মে অভিনয় করার প্রস্তাবও এসেছে দুই একটা ! জিনিয়া বুঝতে পারল , সে লাইন পেয়ে গেছে ! খুব শিগ্রই তার স্বপ্ন তার হাতে ধরা দিবে !
সকাল বেলা কলেজে যাওয়ার সময় জিনিয়া তানিয়াকে তার এই ঘটনা জানালো । তানিয়া বললো , এতোই সহজ অভিনয় ! ডিএসএলআর ক্যামেরায় ছবি তুলে ফেইসবুকে পোষ্ট করলেই অভিনয় শিল্পী হওয়া যায় ! জিনিয়া বললো , তাইতো মনে হচ্ছে !
জিনিয়া দুই একটা ইনবক্সের টেক্সট তানিয়াকে দেখালো । তানিয়া বললো , আমি শুনেছি এইসব শরীর ভোগের টোপ । মিউজিক ভিডিও, নাটক আর শর্টফিল্মে অভিনয়ের সুযোগ দেওয়ার নাম করে শরীর ভোগ করে । জিনিয়া বললো , সে আমি জানি । আমার টার্গেট অভিনয়ের মাধ্যমে নিজের খ্যাতি এবং টাকা আয় করা । সেখানে আমার শরীর একটা টোপ তাদের জন্য । তানিয়া বললো , তুই আর ভালো হইলি না ! জিনিয়া বললো তানিয়াকে , তুই ভালো হয়ে মুড়ি খা আর আমি খারাপ হয়ে খ্যাতি আর টাকা কামায় !
জিনিয়া তার সবচাইতে ভালো কাপড়টি পড়ে সমুদ্র পাড়ে গেলো । সেখানে তানভীর আর তার এক বন্ধু রাতুল জিনিয়ার জন্য অপেক্ষা করছে । জিনিয়ার সাথে তানভীর রাতুলের পরিচয় করায় দিলো । বললো, রাতুল মিউজিক ভিডিও , নাটক এবং শর্টফিল্ম বানায় । সে জিনিয়াকে দেখতে আসছে । জিনিয়া রাতুলের সাথে বেশ হাঁসি খুশি হয়ে পরিচিত হল । ছবি তোলার পর তারা খাওয়া দাওয়া করলো । খাওয়া দাওয়ার এক পর্যায়ে তানভীর বললো, রাতুলের বাসা খালি আছে । আজ রাত জিনিয়া রাতুলের বাসায় থাকতে পারবে কি না । জিনিয়া বললো , রাতে থাকা তার জন্য কোন সমস্যা না তবে কোন কাজ ছাড়া রাতে থেকে কি ফায়দা ? রাতুল বললো, তার স্ক্রিপ্ট নিয়ে রাতে জিনিয়ার সাথে কথা বলতে চায় । সাথে তানভীরও থাকবে । আরও একটি মেয়ে থাকবে তাদের সাথে । গল্প হবে আড্ডা হবে নেশাও হবে । জিনিয়া বললো , বাসা যদি সিকিউর হয় তাইলে সে রাতে থাকতে পারবে । সমস্যা নাই ।
রাতুলের বাসাটা বেশ সুন্দর । বুঝায় যায় পয়সাওয়ালা বাপের পোলা । দুই একটা মিউজিক ভিডিও বানাইছে । এখন একটা শর্টফিল্ম বানাবে । সেই শর্টফিল্মের একটা চরিত্র জিনিয়াকে দিবে । জিনিয়াও জানে এইজন্যে তাকে রাতুলের সাথে শুইতে হবে । কারো সাথে ফায়দা হাসিলের জন্য শোয়া জিনিয়ার জন্য কোন ব্যাপারই না !
রাতুলের বাসায় রাত কাটিয়ে সকালে ফিরার সময় রাতুলকে বলল জিনিয়া তার কিছু টাকা লাগবে , রাতুল জিজ্ঞাস করলো , কতো ? জিনিয়া বললো , হাজার তিনেক । রাতুল জিনিয়াকে তিন হাজার টাকা দিয়ে বলে , বেবি ডাকলেই এসো । এই লাইনে প্রচুর টাকা । জিনিয়া বলে , গোপনীয়তা মেনটেইন করলে অবশ্যই যখনই ডাকবে তখনই পাবে । রাতুল বলল, মেয়েদের গোপনীয়তা আমি রক্ষা করি ।
জিনিয়া সকালে বাসায় আসার সময় তানিয়ার জন্য একটা বডিস্প্রে একটা ঘড়ি আর একটা বার্গার নিয়ে আসলো । তানিয়া বলল, এইসব কোথা থেকে ? জিনিয়া বললো , তুই আমার জানে জিগার দোস্ত । মার্কেটে গেছিলাম আর তোর জন্য নিয়ে আসলাম । তানিয়া ঘড়ি , বডিস্প্রে উপহার পেয়ে খুবই খুশি !
বার্গার খেতে খেতে তানিয়া জিজ্ঞাস করে, রাতে কই ছিলি ? জিনিয়া বলে , একজন উঠতি ডিরেক্টরের সাথে । এই কথা শুনে তানিয়ার খাওয়া বন্ধ হয়ে গেলো ! জিনিয়া বলে , বার্গার খা । খুবই ভালো বার্গার কেএফসি’র বার্গার । তানিয়া বলে , তুই ডিরেক্টরের সাথে সেক্স করেছিস ? জিনিয়া বলে , হ্যাঁ । শুধু সেক্স না দোস্ত । মদ গাঁজাও খেয়েছি । কালকের রাতটা বলতে পারিস আমার এই বয়সের সেরা রাত ! তানিয়া বলে , তুই আর ভালো হইলি না ! জিনিয়া বলে , তুই ভালো হয়ে আপাতত বার্গার খা আর তারপর পানি খাইস ! আমি বাথরুমে ন্যাংটো হয়ে গোসল করবো অনেকক্ষণ । এর মধ্যে তুই আমার জন্য এককাপ গরম গরম চা বানাই রাখবি । আমি যেনো গোসল সেরে আরামচে চা খাইতে পারি !
তানিয়ার আজকে প্র্যাকটিস আছে । প্র্যাকটিসটা খুবই গুরুত্বপূর্ন । আগামী সাপ্তাহে শিল্পকলার হল রুমে তাদের নাটক মঞ্চস্থ হবে । তাই সকলের চরিত্র ঠিকঠাক ভাবে ফুটিয়ে তুলতে হবে । যারা যারা চরিত্র ঠিকঠাক তুলতে পারবে না । তারা তারা বাদও পড়তে পারে । তানিয়া চায় না সে বাদ পড়ুক । তাকে অভিনয় শিল্পী হতেই হবে । সে খুব মনোযোগ দিয়ে রিহার্সেল করছে । তার ধ্যানজ্ঞান আপাতত শুধুই অভিনয় ।
আর বাইরে যথারীতি জিনিয়া ফুটফাতে বসে আড্ডা দিচ্ছে । এমন সময় একটা ফোন আসলো , হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে পরিচয় দিলো , রাতুল । আগামী পরশু শুটিং আছে কক্সবাজার দুই দিন থাকতে হবে । জিনিয়া কি যেতে পারবে ? জিনিয়া বললো , যেতে পারবে । তবে কতটাকা দিবে তাকে? রাতুল বললো , পঁচিশ হাজার থেকে ত্রিশ হাজার দিবে । সে বললো , সে রাজি তবে তাকে হাফ এডভান্স করতে হবে । বাকিটা কাজ শেষে । রাতুল বলল, সে কথা বলে জানাবে ।
তানিয়া রিহার্সেল শেষ করে বের হয়ে জিনিয়ার কাছে এসে বসলো । জিনিয়া জিজ্ঞাস করলো , কিরে তোর রিহার্সেল কেমন হলো ? তানিয়া বললো , বেশ ভালো হয়েছে । তো তোর মন খারাপ কেনো ? তানিয়া বলল , ফ্যামেলিতে টাকা পয়সা নিয়ে সমস্যা চলছে । এই মাসে টাকা পাঠাতে পারবে না । মেস ভাড়া খাওয়া খরচ কলেজের যাতায়ত কিভাবে ম্যানেজ করবে তা বুঝতে পারছি না ! জিনিয়া বললো , নো প্রবলেম বেবি ! মে হু না !
তানিয়া বললো , মে হু না মানে কি ! তোর ফ্যামেলির খবরতো আমি জানিই ! তোর খরচ চালাইতে হিমশিম খায় ! তুই আমার খরচ চালাইবি কেমনে ! জিনিয়া বলে , আমিতো আর তোর মতো ভোদাই না ! আমি জীবনকে চালাইতে জানি । তুই টেনশন নিস না ! আমার একটা কাজের অফার আছে । কাজটা হলে প্রায় পচিশ হাজার মতো টাকা পাবো । আর এতেই তোর আর আমার আরামচে বেশ কয়েকমাস কেটে যাবে !
তানিয়া বলে , কি বলিস তুই ! আমি এতো দিন অভিনয় শিখে একটা নাটক মঞ্চস্থ করতে পারছি না ! আর তুই শিল্পকলায় আড্ডা দিয়ে গাঁজা বিড়ি খেয়েই অভিনয় করবি ! জিনিয়া বলে , একেই বলে দোস্ত অভিনয় শিল্পী হওয়ার শর্টকার্ট রাস্তা !
রাতে জিনিয়ার নাম্বারে একটা ম্যাসেজ আসে । জিনিয়া ওপেন করে দেখে বিকাশ করা হয়েছে তার নাম্বারে পনেরো হাজার টাকা । জিনিয়ার চোখ কপালে উঠে গেছে । বিশ্বাসই হচ্ছে না ! এর মধ্যে রাতুলের ফোন আসে । জিনিয়া ফোন রিসিভ করে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে রাতুল জিজ্ঞাস করে , টাকা আসছে কি না ? জিনিয়া বলে । হ্যাঁ টাকা আসছে । রাতুল বলে , কাল সকাল দশটায় শিল্পকলায় অপেক্ষা করতে সেখান থেকে একজন লোক তাকে পিক করবে । যে পিক করবে সে প্রডিউসার । প্রডিউসারের নাম্বার তাকে টেক্সট করে দেওয়া হয়েছে । জিনিয়া বলে , নো প্রবলেম । সে উপস্থিত থাকবে ।
সকালে যাওয়ার আগে বাসার নিচের দোকান থেকে ক্যাশ আউট করে পাঁচ হাজার টাকা তানিয়াকে দিয়ে জিনিয়া বলে , আমি দুই তিনদিন কক্সবাজার থাকবো । তুই টেনশন করিস না । এই টাকা দিয়ে তুই চল । আমি কক্সবাজার থেকে এসে আমরা আর এই মেসে থাকবো না । আমি আর তুই একটা আলাদা ফ্ল্যাট নিবো । সেখানে তুই আর আমি থাকবো ।
তানিয়া বলে , কি বলিস তুই ! এতো টাকা পাবো কই আমি ! জিনিয়া বলে , তোর টাকা পাইতে হবে না ! টাকা পাবো আমি । তুই শুধু খাবি পড়বি আর অভিনয় শিখবি ! আর টেনশন নিস না ! তুই একটা বাসা খোঁজ তিন রুমের । দুই বাথ ড্রয়িং ডাইনিং আলাদা এবং অবশ্যই যেনো বেলকনি থাকে ।
তানিয়া জিনিয়াকে বলে , তুই আর ভালো হইলি না ! জিনিয়া তানিয়াকে বলে , তুই ভালো হয় হা পিত্তেস কর আর আমি আমার মতো জীবন যাপন করে টাকা আর খ্যাতি কামাই !
তানিয়ার আজ নাটক মঞ্চস্থ হবে । কিন্তু তার আজ মনটা খুবই খারাপ । কারণ জিনিয়া দেখতে পারছে না তার অভিনয় । জিনিয়া দেখলে তার খুবই ভালো লাগতো । রাতের বেলায় তার সাথে অভিনয় নিয়ে আলাপ আলোচনা করা যেতো । কিন্তু সে গেছে কক্সবাজার । তার বেশ রাগ লাগছে । মাথা থেকে জিনিয়ার অনুপস্থিতি তানিয়া কোন ভাবেই নামাতে পারছে না । এর মধ্যে বেল বেজে উঠলো । মানে একটু পরেই সবাইকে মঞ্চে উঠে যেতে হবে । নাটক শুরু হবে । তানিয়া চেষ্টা করছে , জিনিয়ার চিন্তা মাথা থেকে বাদ দেওয়ার কিন্তু সে কোন ভাবেই বাদ দিতে পারছে না । সে ভাবছে , তার অভিনয় কেমন হয়েছে তা কাকে সে জিজ্ঞাস করবে !
জিনিয়ার শুটিং শুরু হয়েছে । পরিচালক তাকে কি কি করতে হবে সব বুঝিয়ে দিয়েছে রাতে । সাথে প্রডিউসারও ছিলো । পরিচালক এবং প্রডিউসার জিনিয়াকে বলেছে , অভিনয় হলো ডিরেক্টর নির্ভর একটি আর্ট । যে আর্টিষ্ট ডিরেক্টরের সাথে খুব সহজ সুন্দর এবং ইজি গোয়িং সম্পর্ক তৈরি করতে পারবে । সে আর্টিষ্ট খুব দ্রুত মিডিয়ায় উপরে উঠতে পারবে । আর মিডিয়ায় উপরে উঠতে হলে পরিচালক এবং প্রডিউসারের সাথে খুব সহজ সুন্দর এবং ইজি গোয়িং সম্পর্ক রাখতে হয় ।
জিনিয়া মিডিয়া কি সেটি বুঝে যায় । আর সে ডিরেক্টর এবং প্রডিউসারের সাথে খুবই ভালো সম্পর্ক মেইন্টেইন মানে কি তাও জেনে যায় !
শুটিং শেষে প্রডিউসার জিনিয়াকে বলেছে , তার আচার আচরন এবং কাজে সে খুবই সুন্তষ্ট । আগামী মাসে তার একটা টেলিফিল্মের জন্য সে জিনিয়াকে ব্যাংকক নিয়ে যেতে চায় । জিনিয়া যেতে পারবে কি না ? জিনিয়া প্রডিউসারের কাছে জানতে চায় , কয়দিনের জন্য এবং কতো টাকা দিবে ? প্রডিউসার জিনিয়াকে বলে , পনেরো দিনের জন্য এবং এর জন্য এক লাখ টাকা পেমেন্ট দিবে । জিনিয়া বলে সে যেতে পারবে এবং তার জন্যে ফিফটি পার্সেন্ট টাকা এডভান্স দিতে হবে নগদ । আর ফিফটি পার্সেন্ট কাজ শেষে । প্রডিউসার বলে , নো প্রবলেম ।
জিনিয়া কক্সবাজার থেকে প্রডিউসারের সাথে ফ্লাইটে ফিরলো । প্রডিউসার তাকে বাসায় নামিয়ে দিতে ছেয়েছিলো । কিন্তু জিনিয়া বলেছে , সে একাই বাসায় যেতে পারবে । জিনিয়ার এখন স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে । সে থিয়েটারে অভিনয় না শিখেও এখন অভিনয় করতে পারছে এবং টাকা কামাতে পারছে । তার শর্টকার্ট ফর্মুলা বেশ সুন্দর কাজে লেগেছে ।
জিনিয়া মার্কেটে গিয়ে তানিয়ার জন্য তিনটা জামা এবং দুই জোড়া জুতা, বেশ কিছু নামী ব্র্যান্ডের ফারফিউম, প্রসাধনী আর একটা দামী মোবাইল সেট কিনলো । তারপর বাসায় ফিরলো ।
তানিয়া জিনিয়াকে দেখে চিনতেই পারছে না ! তার হেয়ার স্টাইল তার গেট আপ মেকাপ জিনিয়াকে বদলে দিয়েছে । জিনিয়া তানিয়াকে জড়িয়ে ধরে বললো, দোস্ত আমার স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে । আমি আগামী মাসে ব্যাংকক যাচ্ছি পনেরো দিনের জন্য । একলক্ষ টাকা পেমেন্ট । এই নে তোর জন্য জামা কাপড় জুতা প্রসাধনী আর মোবাইল । তানিয়া বলে, আমি আজ এতোদিন থিয়েটার করে এক টাকাও কামাইতে পারলাম না আর তুই শিল্পকলার ফুটপাতে বসে গাঁজা বিড়ি খেয়ে এতো টাকা কামাইতেছিস ! তোর শর্টকার্ট লাইনতো তোর ভালোই কাজে লাগছে !
জিনিয়া তানিয়াকে বলে , দোস্ত অভিনয় হইলো ডিরেক্টর নির্ভর একটা আর্ট । অভিনয় দিয়ে তুই যদি টাকা ইনকাম করতে চাস তাইলে তোকে ইজি গোয়িং হতে হবে । ডিরেক্টর এবং প্রডিউসারের সাথে শুইতে হবে । না শুইলে টাকা কামাইতে পারবি না । অভিনয় করতে পারবি কিন্তু অভিনয় করে জীবন চালাইতে পারবি না । তোরা যারা থিয়েটারে অভিনয় করিস তারা অভিনয় করতে পারবি বাট অভিনয় করে জীবন চালাইতে পারবি না ।
তানিয়া জিনিয়াকে বলে , আমার অভিনয় করে জীবন চালাইতে হবে না । আমি অভিনয় করে শুধু সম্মানটুকু কামাইতে চাই । অভিনয়ের নাম দিয়ে ডিরেক্টর এবং প্রডিউসারের সাথে শুইয়ে আমার টাকা কামানো লাগবে না । অভিনয় আমার কাছে একটি নেশা এটি আমার কাছে পেশা নয় ।
জিনিয়া তানিয়াকে বলে , দোস্ত অভিনয় আমার কাছে পেশা । এইটাকে আমি পেশা হিসাবে নিলাম । এবং এই পেশায় আমাকে টিকে থাকতে হলে আমাকে ডিরেক্টর এবং প্রডিউসর নির্ভর হইতে হবে । কারণ এই পেশায় ডিরেক্টর এবং প্রডিউসররাই হলো ঈশ্বর । আর ঈশ্বর যদি কোন আর্টিষ্টের উপর খুশি থাকে তাহলে ওই আর্টিষ্টের কাজের অভাব হবে না । আর কাজ মানে অঢেল টাকা । আর টাকা মানে সম্মান সামাজিক খ্যাতি নাম যশ সবই !
জিনিয়া তানিয়াকে জিজ্ঞাস করে , বুঝা গেছে ব্যাপারটা ?
জিনিয়া তানিয়াকে বলে, তুই আর ভালো হইলি না !
তানিয়া জিনিয়াকে বলে, তুই ভালো হইয়া মুড়ি খা আর আমি ডিরেক্টর আর প্রডিউসারদের খুশি কইরা ব্যাংকক যাইগা !

শুক্রবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৭

আমরা চাই , আওয়ামীলীগ জিতলে জিতুক গোটা বাঙলাদেশ জিতুক গোটা বাঙলাদেশের মানুষ ।

আওয়ামীলীগ সরকার টানা ক্ষমতায় । বিএনপি জামাত হেফাজত সরকার ও আওয়ামীলীগরে বহুবার চেষ্টা করেও বেকাদায় ফেলতে পারে নাই । তারা অবশ্য বেশ কয়েকবার তাদের শক্তির প্রদর্শন করেছে । কিন্তু সরকার ও আওয়ামীলীগের দুরদর্শিতায় তা নস্যাৎ হয়ে গেছে ।

দেশের বাম শক্তিগুলো সরকার ও আওয়ামীলীগের গা ঘেঁষা । তারা মুখে সরকার ও আওয়ামীলগীগের বিরুদ্ধে কথা বললেও আদতে এই মূহুর্তে বামদের আওয়ামীলীগ ছাড়া অন্য কোন উপায় নাই । ভোটের রাজনীতিতে এই দেশের বামদের অবস্থা জামানত ফেরত পাওয়া যায় না টাইপ ব্যাপার ! আর দেশের সকল উগ্রধর্মান্ধ শক্তিগুলো সরকার ও আওয়ামীলীগ বিরোধী ।

দেশে মূলত রাজনৈতিক দল গুলো দুই ভাগে বিভক্ত । যারা মুক্তিযুদ্ধের ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিশ্বাস করে ধারণ করে সেই মোতাবেক বাঙলাদেশ গড়তে চায় তারা সরকার ও আওয়ামীলীগপন্থী । আদর্শের জায়গায় ভিন্নতা থাকলেও চেতনার জায়গায় তারা এক ।

আর যারা মুক্তিযুদ্ধের ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিপক্ষে , যারা ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র গড়তে চায় পাকিস্তান আফগানিস্থান এবং সৌদি আরবের মতো তারা এক ।

মোদ্দাকথা মুক্তিযুদ্ধের ধর্মনিরেপক্ষ অসাম্প্রদায়িক চেতনা বনাম মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী ধর্মীয় চেতনা ।
শুধুমাত্র ধর্মীয় চেতনা দিয়ে কোন রাষ্ট্র চলতে পারেনা । তার প্রকৃত উদাহারণ পাকিস্তান । ধর্মীয় চেতনা নিয়ে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান আলাদা হলেও মাত্র ২৩ বছরের মাথায় দেশটি ভেঙ্গে ১৯৭১ সালে দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায় । এক ভাগের নাম হয় বাঙলাদেশ ।

এখন যদি বাঙলাদেশকে আবার ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র বানানোর পায়তারা করা হয় তাহলে মুক্তিযুদ্ধের দুই লাখ মা বোনের ইজ্জত ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত বৃথা প্রমাণিত হবে । এই জন্যেই আমরা বলি, আমাদের ধমনীতে শহিদের রক্ত । এই রক্ত কোনদিনও বেঈমানি করে না । কিসের সাথে বেঈমানি করে না ? ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক চেতনার সাথে বেঈমানি করে না ।

সরকার ও আওয়ামীলীগ টানা ক্ষমতায় থাইকা এই দেশের মুক্তিযুদ্ধের ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিরোধী শক্তিদের কিছুটা দমাইয়া রাখছে ঠিকই কিন্তু তারা ব্যবসায়ীদের দমাইয়া রাখতে পারে নাই । ধর্মীয় উগ্রবাদী মুক্তিযুদ্ধের ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিরোধী শক্তি কিছুটা সরকার ও আওয়ামীলীগের নিয়ন্ত্রনের ভিতর থাকলেও ব্যবসায়ীরা সরকারের একেবারেই নিয়ন্ত্রনের বাইরে ।

বাজার সরকার ও আওয়ামীলীগের নিয়ন্ত্রনের বাইরে । বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় প্রত্যেকটা জিনিসের দাম শুনলে শরীরে জ্বর চলে আসে । তখন মানুষ মুক্তিযুদ্ধের ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক চেতনাতো দূরে থাক সরকার ও আওয়ামীলীগের নাম শুনলেই গালাগালি করে । গতকাল বেগুনের দাম জিজ্ঞাস করেছিলাম , কইলো একশো বিশ টাকা । কোন সবজিই পঞ্চাশ টাকার নিচে নাই । এই যদি বাজারের অবস্থা হয় তাইলে মানুষ খাবে কি ? চলবে কিভাবে ?
চেতনা তো আর খাওয়া যায় না । মানূষ যা ইনকাম করে তা দিয়া আরামচে তিন বেলা খাইতে না পারলে সরকার ও আওয়ামীলীগরে নিশ্চয় চুমা দিবে গালি না দিয়া ? আর সরকার ও আওয়ামীলগরে গালি দিলে এই দেশে মুক্তিযুদ্ধের ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক চেতনা কায়েম করবে কোন দল ?

সামনে নির্বাচন । সরকার ও আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে ধর্মকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে একাত্তরের পুরনো ঘাতক দালাল জামাত , হেফাজত তার সাথে যোগ দিছে বিএনপি । তার উপর যদি দেশের সাধারন মানূষ ক্ষ্যাপে যায় তাইলে সরকার ও আওয়ামীলীগের অবস্থা আগামী নির্বাচনে ভালো হবে না । আওয়ামীলীগ হারবে এটি নিশ্চিন্তে বলা যায় ।

আমরাতো জানিই, আওয়ামীলীগ হারলে হারে মুক্তিযুদ্ধের ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক চেতনা , জাতির পিতার আদর্শ তথা গোটা বাঙলাদেশ । আর আওয়ামীলীগ জিতলে শুধুমাত্র জিতে আওয়ামীলীগ ।

আমরা চাই , আওয়ামীলীগ জিতলে জিতুক গোটা বাঙলাদেশ জিতুক গোটা বাঙলাদেশের মানুষ ।
জয় বাঙলা ।

।।জেলখানার জিন্দেগী।।

ছেলেটার নাম মোহাম্মদ আলী হোসেন । বাড়ি টেকনাফ কলেজ রোড । কর্ণফুলী চার নাম্বার ওয়ার্ডের ইনচার্জ । ইনচার্জ মানে হইলো, মেটের সেকেন্ড ইন কমান্ড । ওয়ার্ডের সবাই থাকে আলী ভাই কখনো কখনো আলী মেট বইলা ডাকে । বয়স আনুমানিক আটাশ ত্রিশ হবে । উচ্চতা পাঁচ ফুট তিন চার মতন । ওজন ৫০ থেকে ৫৫ কেজির উপরে হবে না ।

দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে । আসরের নামাজের পর ফজায়েল আমল , মোকসুদুল মোমিনিন এবং আরো অন্যান্য ধর্মীয় বই পুস্তক পড়ে । মাগরিবের নামাজের পর ওয়ার্ডের অতি ধার্মিকদের লইয়া ফজায়েল আমল অথবা মোকসুদুল মোমিনিনের লেখাগুলা পড়ে পড়ে শুনায় এবং তার বিশদ ব্যাখ্যা বুঝাইয়া দেয় । তারপর খুব লম্বা একটা মোনাজাত ধরে । মোনাজাতের সময় দশ মিনিটের কম হয় না । মোনাজাত করার সময় সে চিল্লাইয়া চিল্লাইয়া কাঁদে তবে তার চোখে আমি পানি দেখি নাই । তার কান্না মিশ্রিত মোনাজাত অন্যদের চোখে ঠিকই পানি আইনা দেয় ।
জেলখানায় নাশকতা মামলায় যতো জামাত শিবির , বিএনপি এবং হেফাজতিদের নেতা কর্মী আছে তাদের সকলের সাথেই তার খুবই ভালো সম্পর্ক । তার সুস্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে, আওয়ামীলীগ ইসলামের শত্রু বলে আজ জামাত শিবির এবং হেফাজতিদের মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলখানায় পাঠাইছে । পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ছাড়া জেলখানায় তার কাজ হইলো , কোন কোন ওয়ার্ডে জামাত শিবির এবং হেফাজতিদের নেতা কর্মী আছে তাদের খোঁজ খবর নেওয়া এবং তাদেরকে জেলখানার ভিতর কোন সাহায্য সহযোগিতা করা যায় কি না তার তদবির করা ।

আলী হোসেন মনে করে , আওয়ামীলীগ রাজাকার যুদ্ধাপরাধীদের কথা বলে আসলে দেশের আলেম সমাজের মাথা কেটে দিচ্ছে । দেশকে আলেম শূন্য করে দিচ্ছে । ইসলামকে ধবংস করার জন্য যুগে যুগে নমরুদ ফেরাউনদের জন্ম হয়েছিলো আর এই বাঙলাদেশে আওয়ামীলীগই হইলো নমরুদ ফেরাউনের উত্তরসূরি । যারা আওয়ামীলীগ করবে হাশরের ময়দানে তাদেরকে জাহান্নামের আগুনে পুড়তে হবে ।

আমি একদিন তাকে ডেকে জিজ্ঞাস করলাম , আলী ভাই আপনার মামলা কি ? সে বললো , সে ট্রাকের হেল্পারি করতো । ক্লাস সেভেন পর্যন্ত পড়া লেখা করেছে । অভাব অনটনে বেশিদূর পড়তে পারে নাই । সে ট্রাকের জোগানে ইয়াবা লইয়া টাকায় পৌছাইয়া দিতো । প্রতি পিসে এক টাকা তার । একদিন টেকনাফ থেকে কাঠ বোঝাই কইরা ট্রাক নিয়া ঢাকায় যাচ্ছিলো । আর ট্রাকের জোগানে ছিলো এক লাখ পিস ইয়াবা । সোর্সের মারফত পুলিশ খবর পাইয়া পটিয়া থানা পুলিশ ট্রাক আটকায় । এবং এক লাখ পিস ইয়াবা ট্রাকের জোগানে পায় । আর পটিয়া থানা পুলিশ তাকে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইনে মামলা দেয় । আর সেই মামলায় তার পনেরো বছর সাজা হয়েছে ।

আমি এই কথা শুনে তারে জিগাইলাম, আলী ভাই আপনি কি জানেন হারামখোরের শরীর জান্নাতে প্রবেশ করিবে না ? আলী ভাই কয় , জানি । তাইলে আপনি হারাম ব্যবসা করতেছিলেন কেনো ? ভাই আল্লাহর কাছে মাফ চাইতেছি আল্লাহ মাফ কইরা দিবে । বুঝলাম আল্লাহ মাফ কইরা দিবে । এই যে আপনি লোকজনরে বইলা বেড়াইতাছেন আওয়ামীলীগ করলে জাহান্নামের আগুনে পুড়তে হবে তা কি ঠিক হইতাছে । সে কয় , অবশ্যই ঠিক হচ্ছে । আওয়ামীলীগ ইসলামের শত্রু আওয়ামীলীগ করলে জাহান্নাম নিশ্চিত ।

আমি আর তার লগে কথা বাড়াইলাম না । আমি একটা ধারনা পাইলাম , মোহাম্মদ আলী হোসেন নিজের অপরাধ ঢাকার জন্য ধর্মকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করছে । তার কাছে ধর্ম বড় নয় তার কাছে ব্যবসা বড় । তাই সে ধর্মকে ঢাল হিসাবে ধইরা নিজের অপরাধ আড়াল করছে । আর এতে মানুষ বুঝতেই পারছে না , আলীর মতো পাঁচ ওয়াক্ত একজন নামাজি যে ধর্ম ছাড়া চলেই না সে কিভাবে অপরাধ করতে পারে !
আমি এইটা নিশ্চিত , যারা নিজের অপরাধ ঢাকতে ধর্মকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে তারা ধার্মিক নয় তারা ভন্ড । মোহাম্মদ আলী হোসেনও ভন্ড ।

মোহাম্মদ আলী হোসেনদের মতো লোক এখন এই বাঙলাদেশে যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ।

শনিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৭

।। জেলখানার জিন্দেগী ।।

জেলখানায় বিভিন্ন দলের ওয়ার্ড আছে । জামাত শিবিরের ওয়ার্ড , বিএনপির ওয়ার্ড এবং আওয়ামীলীগের ওয়ার্ড । দলের মতাদর্শের লোকরাই সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে থাকতে পারে । দলীয় ওয়ার্ডে থাকলে সুযোগ সুবিধা একটু বেশি ভোগ করা যায় ।
প্রত্যেকদিন সকাল বেলা "আমদামী"তে (যেখানে নতুন আসামীদের এনে রাখা হয়) জামাত ওয়ার্ডের মেট (যে ওয়ার্ডের পরিচালক) চিল্লায়ইয়া বলে , জামাত শিবিরের কোন ভাই আছো ? থাকলে হাত তুলো । যারা হাত তুলে তাদের সাথে প্রাথমিক আলাপ ( কি মামলা , কোন থানা এইসব) সেরে ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হয় ।
বিএনপি আর আওয়ামীলীগের মধ্যে এইসব নাই । একমাত্র সুপারিশ ছাড়া বিএনপি এবং আওয়ামীলীগের ওয়ার্ডে কেউ থাকতে পারে না । নেতারা বাইর থেকে সুপারিশ করলেই কেবল জায়গা হবে নইলে হবে না ।
পলিটিক্যাল ওয়ার্ডে সাধারন ওয়ার্ড থেকে খরচ একটু বেশি । কারণ এইখানে থাকা খাওয়া উন্নত মানের । জামাত ওয়ার্ডে যে যা পারে তা দেয় নির্দিষ্ট হিসাব নাই কারণ সংগঠন থেকে প্রতি মাসে বিপুল পরিমান একটা অর্থ জেলখানায় তাদের নেতা কর্মীদের থাকা খাওয়া এবং মামলা পরিচালনা বাবদ পাঠানো হয় ।
বিএনপি এবং আওয়ামীলীগের ওয়ার্ডে মাসিক খরচ সাড়ে চার হাজার টাকা । এই টাকার এক টাকাও ওয়ার্ডের মেট খায় না সবই আসামীদের জন্য খরচ করে । তবে জামাত ওয়ার্ডের মেট খরচের কোন হিসাব কাউকে দেন না বরঞ্চ উনি জেলখানার ইনকাম দিয়া বাড়িতে টাকা পাঠান ।
জেলখানায় পলিটিক্যাল ওয়ার্ড গুলো থেকে দলীয় প্রোগ্রামগুলো পালন করা হয় । জামাতিরা জামাতিদের গুলা বিএনপি বিএনপির গুলা আর আওয়ামীলীগ আওয়ামীলীগের গুলা । জামাতিরা রাজাকার যুদ্ধাপরাধীদের জন্য মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে রাজাকার যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যু দিবসে । সেইদিন জেলখানার সকল জামাতি আকিদার লোকদেরকে দাওয়াত দেওয়া হয় । তারা আসে মিলাদ পড়ে তারপর খাইয়া দাইয়া চইলা যায় । বিএনপি জিয়াউর রহমানের জন্মদিন মৃত্যু দিন আর খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালন করে । আওয়ামীলীগ ওয়ার্ড থেকে আওয়ামীলীগের সকল দলীয় কর্মসুচি পালন করা হয় ।
আওয়ামীলীগের ওয়ার্ড পরিচালনার জন্য দল থেকে একটা টাকাও দেওয়া হয় না । যারা থাকে তারাই ভাগাভাগি কইরা খরচ দিয়া পলিটিক্যাল প্রোগ্রামগুলা করে ।
বিএনপির ওয়ার্ডটির খরচ এখন আসলাম চৌধুরী দেয় । কিন্তু আওয়ামীলীগের বেলায় কেউ দেয় না । তারপরেও আওয়ামীলীগের ওয়ার্ড থেকে দলীয় প্রোগ্রাম গুলা পালন করা হয় ।
আমি জেলে থাকাকালীন সময়ে দেখেছি, আগষ্ট মাসকে শোকের মাস হিসাবে পালন করতে । ওয়ার্ডের সামনে এক তারিখ থেকে একত্রিশ তারিখ পর্যন্ত কালো পতাকা বাঁধা ছিলো । ১৫ আগষ্ট শোক দিবস পালন করা হয়েছিলো । জেলখানায় আমরা যারা আদর্শিক আওয়ামীলীগ ছিলাম তারা ১৫ আগষ্টের গোটা দিন কালো ব্যাজ পড়েছিলাম । আওয়ামীলীগের ওয়ার্ড থেকে দুই জায়গায় কোরান খতম দেওয়া হয়েছিলো । একটি ছিলো "কোরান দফায়" আরেকটা দেওয়া হয়েছিলো , ওয়ার্ডে । তারপর ওয়ার্ড থেকে প্রায় দেড়শোজন লোক'কে দুপুরের খাবার খাওয়ানো হয়েছিলো । এই দেড়শোজন লোকের মধ্যে ছিলো দলীয় নেতা কর্মী সমর্থক , মৌলানা , বৃদ্ধ অসহায় আসামী এবং যারা কোরান খতম দিয়েছিলো, জেলখানার প্রশাসনিক লোক ।
জেলখানা এখন আসলে অনেক মানবিক । যদিওবা এটি জেলখানা । আসামীদের রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় আবেগ অনুভুতি চর্চা করার সীমিত সুযোগ দেওয়া হয় ।
তবে একটা দুঃখের বিষয় , আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার পরেও জেলখানার প্রশাসন , জমাদার সুবেদার মিয়াসাব , মেডিকেল ওয়ার্ডের পরিচালক , ক্যান্টিনের পরিচালক , কেইস টেবিলের সুবেদার , লাইব্রেরির পরিচালক এরা সকলেই জামাত বিএনপির অনুসারী ।
আর তাই জামাত বিএনপির আসামীরা জেলখানায় অন্যান্য দলীয় আসামীদের চাইতে বেশি সুযোগ সুবিধা ভোগ করে ।
ক্যান্টিনে যেকোন জিনিষের দাম বাইরের দামের তুলনায় প্রায় আড়াইগুন বেশি । যার ফলে সাধারণ আসামিদের মধ্যে সরকার বিরোধী একটা মনোভাব তৈরি হয় । অথচ এই ক্যান্টিনটি আওয়ামীলীগের অনুসারী কেউ পরিচালনা করলে এই রকম রক্ত চুইষা খাইতে পারতো না আসামীদের । কারণ এর জন্য দল ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ।
মেডিকেল ওয়ার্ডে চলছে আরেক নৈরাজ্য । সাধারণ রোগীরা থাকতে পারছে না । যারা থাকছে তারা বেশির ভাগই রোগী নয় । মেডিকেল ওয়ার্ডটি যে চালায় সে পটিয়া ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি । এখন সে মাসিক বারো হাজার টাকা করে নিয়ে পয়সাওয়ালা আসামীদের আরামে থাকার ব্যবস্থা করছে । যার ফলে সাধারণ রোগীদের মধ্যে সরকার বিরোধী মনোভাব তৈরি হচ্ছে । যার প্রভাব পড়ছে আওয়ামীলীগের উপর ।
আওয়ামীলীগের উর্ধতন নেতারা যদি বাইর থেকে জেলখানার ভেতরে নজর না দেয় তাইলে জেলখানার প্রশাসনিক তেমন একটা পরিবর্তন আসবে বলে মনে হয় না । আর জেলখানার প্রশাসন যদি আওয়ামী অনুসারীদের হাতে না আসে এই আওয়ামীলীগ আমলেও তাইলে আওয়ামীলীগের দলীয় নেতা কর্মীরা যারা দল ক্ষমতায় থাকার পরেও জেল জুলুমের স্বীকার হয় তারা জেলের ভেতরেও নির্যাতিত হইবে ।
বিষয়টা নিয়া আওয়ামীলীগের ভাবা উচিত ।

মঙ্গলবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৭

।। জিপসি রুদ্র'র একদিন ।।

জ্বরের কারণে মুখে যা দিই তাই তিতা লাগে। মনে হইতাছে আইজ সকাল থেকে যা খাইছি তার সবগুলার সাথে তিতা করলার রস মিশাই দিছে।

সকালে ঘুম থেকে উইঠা দুই ঢুক পানি খাইছি। মনে অইছে এ পানি নয় তিতা করলা চিবাই রস আমার পানির বোতলে ভইরা রাইখছে। 

দুই তিন মিনিট যাইতে না যাইতে পেট গুলাইয়া খলখল কইরা বমি। ভাগ্যিস বাথরুম আমার রুমের লগে এটাষ্ট। নইলে মনে অয় আইজ সকালে ঘর ভাসাইয়া দিতাম। অবাজি কি কষ্ট! মনে অইছে জান বাইর অইগেছে! 

বাথরুমে বইসা দাঁত ব্রাশ কইরা খাবার টেবিলে আইলাম। উদ্দেশ্য গরম গরম অল্প ভাত ইলিশ মাছের ঝোল দিয়া খাবো। বইন খুব সকালে উইঠা ভাইয়ের জন্য ভাত রান্না কইরা রাইখছে। কারণ বইন জানে গতকাল রাইতে তার একমাত্র ভাইটি জ্বরের জন্য ভাত খাইতে পারে নাই। তাই সকালে গরম অল্প ভাত খাইয়া ওষুধ খাইতে পারলে ফায়দা হইবে কিছুটা! 

কিন্তু টেবিলে বইসা ধোঁয়া উঠা ভাতের প্লেইট এবং ইলিশ মাছের পাতিল দেইখা মনে অইলো তিতা করলা রস আছে এইসবে। খাইলেই বমি অইবে। বইনরে কইলাম, ভাত খাইতে ইচ্ছা করতাছে না। এক কাপ চা বানা চিনি বেশি দিয়া। দেখি মুড়ি দিয়া খাওয়া যায় কি না! 

চা বানানোর মধ্যখানে আমি কিছু মুড়ি চিবাইলাম । তার কিছুক্ষনের মধ্যে চা দিয়া গেলো । চা'র সাথে মুডি ভিজাইয়া খাইলাম অল্প । তারপর একটা নাপা এক্সট্রা খাইয়া বের হইলাম কোর্টের উদ্দেশ্যে । 

আইজ আমার হাজিরার দিন ধার্য্য ছিলো । উল্লেখ্য , আমি গত জুন মাসের ১৪ তারিখ একজন একাত্তরের ঘাতক দালাল রাজাকার যুদ্ধাপরাধী , তার মেয়ে জামাত শিবিরের ছাত্রীসংস্থার একজন নারী নেত্রী যে এখন মহিলা আওয়ামীলীগের সদস্য এবং জামাত থেকে আমদানিকৃত একজন বর্তমান আওয়ামীলীগ এমপির বিরুদ্ধে লেখার অভিযোগে ৫৭ (২) ধারায় গ্রেফতার হইছিলাম । দীর্ঘ আড়াইমাস বিনা দোষে কারাগারে অন্তরীন থাইকা আগষ্ট মাসের ৩১ তারিখ মহামান্য হাইকোর্ট থেকে জামিনে মুক্তি পাই । আইজ ছিলো তার প্রথম হাজিরা । 

ঘর থেকে অসুস্থ শরীর নিয়া বাইর হইয়া মাথা চক্কর দিয়া উঠলো । মনে অইতাছে আসমান থ্যাইকা আগুন ঝইরা পড়তাছে । যা গরম মনে অইতাছে ছামড়া পুইড়া যাইতাছে । সাড়ে নয়টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কোর্টে ছিলাম । হাজিরা হইছে সাড়ে এগারোটার দিকে । সাড়ে নয়টা থেকে সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত এই সময় উকিলের লগে রাজনৈতিক গাল গল্প এবং তর্কাতর্কি করলাম । উকিল বেশ স্মার্ট । বিএনপি করে । একটা জেলার প্রচার সম্পাদক । তবে আমার লগে যুক্তি তর্ক দিয়া মনে অইলো আমার প্রতি তিনি অনুরক্ত হইলো । কইলো, আপনার মতো এই রকম চেতনা এবং আদর্শিক আওয়ামীলীগ আমি আর দ্বিতীয়টা দেখি নাই । আপনারে আমি সর্বাত্মক সহোযগিতা করবো মামলা নিয়া । ভয় পাইয়েন না , এই মামলায় আপনার কিছুই হবে না । এইসব মামলা গুলা আসলে রাজনৈতিক ভাবে হয়রানি করার জন্যে দেয় । উকিলরে ধন্যবাদ দিয়া যখন রাস্তায় বাইর অইলাম তখন দেখি গরমের পরিমান আরো বাড়ছে । 

একদিকে ক্ষুধার্ত পেট তার উপর জ্বর, এই অবস্থায় হাঁইটা আইলাম নিউ মার্কেট মোড় । আইসা প্রেমিকার ছবি'র ব্যাকগ্রাউন্ড কালার চেঞ্চ কইরা তারে মেইল করলাম । তারপর জামাল খান আইসা এইচএসবিসি'র বুথ থেইকা টাকা উঠাইয়া বাতিঘরে গিয়া কিছুক্ষন ঠান্ডা হইলাম । তারপর সোজা বাসা । 

বাসায় আইসা যখন বাথরুমে মুততে গেলাম দেখি পুরা হলুদ । শুধু হলুদ না গাঁড় হলুদ । বুঝতে পারছি , আগের জন্ডিস আবারো ডিষ্টার্ব মারতাছে । গরমে আর বাইর হওয়া যাইবে না কোথাও । কমপ্লিট বেড রেষ্ট । অল্প কইরা ভাত খাইয়া আরেকটা নাপা এক্সট্রা খাই শুইয়া পড়লাম । ঘড়ি দেখি বরাবর দুইটা । শরীর কাহিল তার উপর ভরা জ্বর শুইতেই চোখ বন্ধ হইয়া আইলো । 

কানের কাছে মোবাইল বাজতাছে । বিরক্তি কারে কয় । ফোন স্ক্রিনে বাপ্পী আলমগীরের নাম ভাসতাছে । সে আমারে একটা গল্প দিছে প্রায় দুই সাপ্তাহ আগে । এই গল্পরে স্ক্রিপ্ট কইরা দিতে হইবে । বাপ্পি আলমগীর ডিরেকশন দিবে । কিন্তু আমি ঢাকা চিটাগাং দৌড়াইতে দৌড়াইতে অর্ধেকে আটকাইয়া রইছি । আইজ বিকাল পাঁচটায় বিস্তারে মিটিং কল করছে বাপ্পি আলমগীর এবং গল্পকার । ঐখানে আমারে যাইতে হবে কারণ গল্পকার গল্প চেঞ্চ করছে । আর আমার স্ক্রিপ্ট শেষ না করার আগে তা জানতে হবে । 

পাঁচটায় বাসা থেকে বাইর হইয়া সাড়ে পাঁচটায় বিস্তারে গেলাম । গল্প বুইঝা লইয়া যখন বাইর অইতাছি তখনই শুরু অইলো কাপুনি দিয়া ভয়াবহ জ্বর । বাপ্পিরে কইলাম , বাপ্পি এই অবস্থায় আমার একা যাওয়া সম্ভব না । তুমি তোমার বাইকে করে আমারে দেওয়ানহাট পর্যন্ত আগাইয়া দিয়া আসো তারপর আমি রিকশা একটা নিয়া বাসায় চইলা যাবো । আর গল্পকাররে কইবা আমারে যেনো সময় দে । কারণ এই অবস্থায় স্ক্রিপ্ট লেখা যাইবে না । 

বাপ্পি আমারে দেওয়ানহাট পর্যন্ত আগাইয়া দিলো । আর আমি রিকশা লইয়া বাসায় আইসা বইনরে কইলাম , বইন আমার জন্যে রাইতে কাঁচা মরিচ ভর্তা করবি আর বেশি করে রসুন দিয়া শাক রান্না করবি এবং একটা ডিমপোচ করবি যেনো ডিমের লালি (কুসুম) একেবারেই টলটলা থাকে । আর এখন লেবু আর চিনি বেশি দিয়া একগ্লাস শরবত বানাইয়া দেয় । আমি অল্প খাইয়া দেখি আরাম লাগে কি না ! 

বইন আমারে লেবুর শরবত বানাইয়া দিলো । এবং খাইয়া আমার বেশ আরাম লাগলো । আর আমি এখন বিছনায় আধশোয়া হইয়া ল্যাপটপে "জিপসি রুদ্র'র একদিন" লিখলাম । আর আপনারা সেটি এখন পড়ছেন ।

রবিবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৭

।। জেলখানার জিন্দেগী ।।

জেলখানার খাবার খুব একটা ভালো হয় না। যারা ডিভিশনে খায় তারা ভালো খায়। কারণ তারা খাওন বাবদ আলাদা টাকা মেট'কে (ওয়ার্ড যে চালায়) দেয়। মেট সেই টাকা দিয়ে বাজার করে। আর চৌকায় (রান্না যেখানে করে) পাকায়। এই রান্না করা বাবদ চৌকার মেট'কে দৈনিক একশো টাকা করে দিতে হয়।
যারা খাওন বাবদ আলাদা টাকা খরচ করতে পারে না তারা জেলখানার খাবার খায়। জেলখানার খাবারের একটা নমুনা বলি। মাছ এক পিস এতোটাই পাতলা যে এক সাইড থেকে অন্য সাইড দেখা যায় এবং ছোট। আমরা যে সাইজকে সাধারণত ছোট বলি তার পাঁচ ভাগের একভাগ ছোট হইলো জেলখানার মাছের সাইজ। মুরগি ও গরুর মাংসের টুকরার সাইজ হাতের বৃদ্ধা আঙুলের তিন ভাগের এক ভাগ। একজনের ভাগে এক টুকরা। গরু অবশ্য কালে ভদ্রে দেয়। সবজি অবশ্য স্বাভাবিক । ভাত ডাল যা ইচ্ছা খাইতে পারে।
জেলখানার হাজতিদের এইসব ডায়েট দিয়া ভাত খাইতে খুবই কষ্ট হয়। তাই তারা কিছু অসাধারণ ভর্তা আবিস্কার করছে। তার মধ্যে উল্ল্যেখ যোগ্য হইলো চানাচুর আর পেঁয়াজু ভর্তা।
চানাচুর ভর্তার রেসিপি হইলো, পরিমান মতো চানাচুর লইয়া কাঁচা মরিচকে আধপোড়া কইরা পেঁয়াজ দিয়া কচলাইয়া তার সাথে একটু নুন মিশাইয়া এই ভর্তা করা হয়। খাইতে বেশ সুস্বাদু।
পেঁয়াজু ভর্তার রেসিপি, পেঁয়াজুকে ডালের মধ্যে কিছুক্ষণ ভিজাইয়া রাইখা নরম করা হয় তারপর কাঁচা মরিচকে আধপোড়া কইরা পেঁয়াজ দিয়া কচলাইয়া তার সাথে একটু নুন মিশাইয়া এই ভর্তা তৈরি করা হয়। খাইতে খারাপ লাগে না।
জেলখানায় আগুন জ্বালানো বিরাট অপরাধ। ধরা খাইলে কেইস খাইতে হয়। হাজতিরা দৈনিক পত্রিকার একটা পাতাকে সরু কইরা ওয়ার্ডের টয়লেটে চলে যায়। একজন পাহারায় থাকে অন্যজন টয়লেটে পত্রিকায় আগুন জ্বালাইয়া মরিচ পোড়ায়। পোড়ানোর জন্য মরিচগুলোকে লোহার চিকন শিকে গেঁথে নেওয়া হয়।
জেলখানায় যেকোন ধরনের ধারালো জিনিস ব্যবহার করা অপরাধ। হাজতিরা টিনের পাতকে পাকায় ঘইষা ধারালো কইরা নেয় আর তাই দিয়ে পেঁয়াজ মরিচ মাছ মাংস এইসব কাঁটে। আর এই টিনের ধারালো পাত ব্যবহার শেষে লুকাইয়া রাখে।
জেলখানায় যারা নগদ টাকা খরচ করতে পারে না তাদের জন্য জেলখানা বড়ই নির্মম এবং নির্দয়।

বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

।। জেলখানার জিন্দেগী ।।

প্রায় সকল মানুষেরই জেলখানা লইয়া কম বেশি ভয় আছে। আমার ভেতরও ছিলো । কিন্তু আমার এখন সেই ভয়টা নাই । কারণ আমি জেলখানার ভয়রে কমপ্লিট জয় কইরা আসছি । জেলখানা কিন্তু বেশ মানবিক । অবশ্য অমানবিক কিছু কিছু ব্যাপার আছে । তবে তা খুবই কম ।

জেলখানার প্রক্রিয়াটা হলো , কেউ যখন গ্রেফতার হয় তখন তাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয় । এই গ্রেফতার প্রক্রিয়াটা দুই ধরনের হইতে পারে । এক, মামলা আছে এই কারনে গ্রেফতার । দুই , আগে গ্রেফতার পরে মামলা ।
থানায় ২৪ ঘন্টা রাখার পর আসামিকে কোর্টে পাঠিয়ে দেওয়া হয় । কোর্ট অপরাধ বিবেচনা করে জামিন দিলে দিলো নইলে জেলখানায় পাঠিয়ে দেয় । থানায় যে ২৪ ঘন্টা রাখে সেই সময় গুলোতে পুলিশের কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করার দরকার হইলে তখন করে নেয় ।

থানায় থাকাকালীন যদি দেনদরবার ( টাকা পয়সা অথবা হ্যালো) করে বাইরে চলে আসা যায় তাইলে সবচাইতে ভালো । আর না হইলে জেলেখানা ।

জেলখানায় ঢুকার লগে লগে সকল আসামিকে ফাইল করে ফেলা হয় । ফাইল মানে হইলো, এক লাইনে চারজন করে বসাইয়া ফেলা । বসারও একটা নিয়ম আছে । পায়খানা করতে যেইভাবে বসে ঠিক সেইভাবে । তারপর গুইনা নেওয়া হয় টোটাল কয়জন আসামি । তারপর একজন লোক জিজ্ঞাস করে , কারো কাছে টাকা পয়সা আছে কি না । থাকলে তা যেনো "পিসি কার্ডে" জমা দিয়ে দেয় । এই টাকা পরে আসামিরা জেলখানায় খরচ করতে পারে ।
এই প্রক্রিয়া শেষে , সকল আসামির কাপড় চোপড় যা আছে তা চেক করে । কোন অবৈধ জিনিষ পাত্তি আছে কি না ।
চেক প্রক্রিয়া শেষে সকল আসামিকে দ্বিতীয় গেইট দিয়া জেলখানার ভিতরে ঢুকাই "কেইস টেবিলে" নিয়ে আসে । এইখানে আসামিদের একজন একজন করে ছবি তোলা হয় । এবং একজন লোক সকল আসামির কাপড় চোপড় চেক করে । এই চেকে যদি কারো কাছে কোন টাকা ক্যাশ পায় তাহলে তা নিয়ে ফেলে ।
"কেইস টেবিল"- এর কাজ শেষে সকল আসামিকে "আমদামী" করা হয় । "আমদামী" মানে হইলো এই আসামিগুলো নয়া আইছে । আমদামী ঘরটা বেশ বড় । এইখানে সকল নয়া আসামিকে একরাইত থাকতে হয় । এইখানেই অসহায় লাগে বেশি । জেলখানার প্রথম খাবার খায় আসামিরা এইখানে । খুবই জগন্য টাইপ লাগে খাইতে । ঘুমাইতে হয় এক হাত সমান জায়গায় ।

সকাল পাঁচটায় ঘুম থেকে তোলে দেওয়া হয় । তারপর "ফাইল" করা হয় । এক লাইনে চারজন করে বসানো হয় । গুইনা দেখা হয় রাইতের বেলায় যেকজন আসামি আইছে সকালেও ঠিক সে কয়জন আছে কিনা । তারপর গরম ভাত দেওয়া হয় । ভাত খাওয়ার পর আসামিদেরকে জেলখানার নিয়ম কানুন সম্পর্কে হালকা ব্রিফিং দেওয়া হয় । ব্রিফিং শেষে মেডিকেল টিম এসে সকল আসামির স্বাস্থ্য পরিক্ষা করে । দেখে শরীরে সনাক্ত করণ চিহ্ন । যেমন তিল , কাঁটা দাগ এইসব ।

এই প্রক্রিয়া শেষে জেলার আসে । জেলার মানে জেলখানার সবচাইতে বড় কর্মকর্তা । সে এসে কার মামলার হাজিরা কবে তা আসামিদের জানিয়ে দেয় ।

এরপর চলে , আসামি বেচা কেনা । "আমদামি" থেকে আসামিদের বেঁচে দেওয়া হয় ওয়ার্ডে । এই বেঁচে দেওয়া প্রক্রিয়াকে বলে "সিসি মারা" । ওয়ার্ডের "মেট"রা গিয়ে আসামিদের জিজ্ঞাস করে মামলা কি । মামলার ধরন দেখে দাম নির্ধারন হয় । যে মামলার জামিন সহজে হয় না সেই মামলার আসামিদের বেশি দাম দিয়ে কিনে নিতে হয় ওয়ার্ডের "মেট"দের । মেট মানে হইলো , যে লোকের নামে ওয়ার্ডটি বরাদ্ধ । মানে ওয়ার্ডের সর্বসর্বা । যার কথায় ওয়ার্ড চলে । মেট কম টাকায় আসামি কিনবে আমদামি থেকে আর আসামি থেকে বেশি টাকা নিবে ওয়ার্ডে নিয়ে গিয়ে । যদি কোন আসামি টাকা দিতে না পারে তাহলে তার উপর শুরু হয় নির্যাতন । যেমন মেটের হাত পা টিপতে দিবে । বাথরুম পরিস্কার করতে দিবে । নিচ থেকে পানি টানতে দিবে । ওয়ার্ড ঝাড়ু দেওয়াবে । আর যে আসামি মেটকে টাকা দিতে পারবে তাকে দেওয়া হবে সিট । সিট মানে হইলো, আপনাকে একটা নির্দিষ্ট জায়গা দেওয়া হবে । যে জায়গায় আপনি কম্বল বিছিয়ে যতোদিন জামিন হইবে না ততোদিন থাকবেন ।

এই আসামী বেচা কেনা প্রক্রিয়াটা অবৈধ । কিন্তু জেলখানায় এইটা অলিখিত বৈধ হইয়া গেছে । যদি কোন আসামির সুপারিশ থাকে তাহলে তাকে কেউ বেচতে পারে না । সে ওয়ার্ডে গিয়া একটা সিট নিয়া আরামেই থাকবে । আর সরকারি খাওন খাবে । যার সুপারিশ নাই তাকে কেনা বেচা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ওয়ার্ডে যাইতে হবে ।
ওয়ার্ডে দুইভাবে খাওনের ব্যবস্থা আছে । এক , সরকারি ভাবে যা দে তা । দুই, মেটের সাথে চুক্তি করে আলাদা টাকা দিয়ে নিজেরা পাক করে খাওয়া । সরকারি ভাবে খাইলে টাকা পয়সা দিতে হয় না । আর মেটের সাথে চুক্তি করে খাইলে দৈনিক দুইবেলা ভাত একশো টাকা । দুপুরে আর রাইতে । রাইতে যদি ভাত বেঁচে যায় তাহলে তা সকালে পানি ভাত হিসাবে খাইতে পারবেন । তবে তরকারি নিতে পারবেন না । তরকারি পাইবেন দুপুরে আর রাইতে । সকালে তরকারি পাইবেন না । সকালে ভাত খাইতে হইলে আপনাকে আলাদা ভাবে ডাল অথবা তরকারি কিনে খাইতে হবে । এইটা চুক্তির বাইরে ।
আপনি যদি পানি না তুলেন নিচ থেকে তাহলে আপনাকে প্রতি সাপ্তাহে একশো টাকা করে দিতে হবে । নইলে আপনার হাগা মুতার পানি আপনাকেই তুলতে হবে । যদি ওয়ার্ডে গোসল করেন তাইলে আপনাকে সাপ্তাহে একশো বিশ টাকা দিতে হবে । নইলে নিচে হাউসে গিয়া লাইন ধইরা গোসল করতে হবে ।

জেলখানায় যদি কোন আসামি অসুস্থ হইয়া পড়ে তাহলে তারজন্য হাসপাতাল আছে । ফ্রি চিকিৎসা এবং ফ্রি ঔষুধ ।
জেলখানায় যদি কেউ আপনার বিরুদ্ধে অন্যায় করে তাহলে আপনি "কেইস টেবিল" এসে বিচার দিতে পারবেন । এবং এই বিচার খুব দ্রুত করে দেওয়া হইবে । অবশ্য জেলখানায় সহজে কেউ "কেইস টেবিল" এসে বিচার দিতে চায় না । ওয়ার্ডের মেট দিয়ে সমাধাণ করাই ফেলতে চায় । "কেইস টেবিল" বিচার বড়ই কড়া । অপরাধ প্রমাণিত হইলে মাইর কারে কয় তা বুঝাইয়া দিবে । মাইরের পর আছে "পানিশমেন্ট ওয়ার্ড" নইলে "সেল" । "পানিশমেন্ট ওয়ার্ড" মানে হইলো, যেসব আসামি বড় বড় ক্রিমিনালি কাজ করে জেলের ভেতর তাদের যেখানে রাখা হয় । যেমন ধর্ষন , চুরি , বাটপারি টাইপ অপরাধ যারা করে । এইখান থেকে কোন আসামি বাইর হইতে পারে না । সারাদিন ওয়ার্ডেই থাকতে হয় । আর সেল মানে হইলো , জেলের ভেতর আরেক জেল । বড়ই কষ্ট সেল ।

জেলখানায় যদি কোন আসামি মাসিক ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা খরচ করতে পারে তাইলে জেলখানা তার জন্য কিছুই না । থাকবে খাইবে ঘুমাবে । আর তার সাথে যদি কারো সুপারিশ থাকে তাইলেতো কথায় নাই । জেলখানা তার জন্য আরামখানা ।

আর যে আসামির টাকাও নাই সুপারিশও নাই সেই আসামির জেলখানার জিন্দেগী বড়ই কঠিন । বড়ই নির্মম ।

ভাগ্য ভালো আমার টাকাও ছিলো সুপারিশও ছিলো । তাই জেলখানায় আমি খারাপ ছিলাম না । আরামেই ছিলাম । খাইছি , বই পড়ছি , সিনেমা দেখছি আর ঘুমাইছি ।

মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

।। জেলখানার জিন্দেগী ।।

জেলখানায় নয়া কেউ গেলে তারে পুরানরা জিগাই , মামলা কি ? আমারেও জিগাইছিলো । আমি কইতাম , আইসিটি এক্ট । বেশির ভাগই বুঝতো না । বেশির ভাগই পাল্টা জিগাইতো , ইবা আবার কি মামলা ? আমি কইতাম , ৫৭ ধারা । আবার জিগাইতো , ইবা কি ধারা ? আমি কইতাম , তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি আইন । তারপরেও বেশির ভাগ লোক বুঝতো না আমার অপরাধ কি । বলতো, তুমি করছোটা কি ?

আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ, আমি একজন রাজাকার যুদ্ধাপরাধী , রাজাকার যুদ্ধাপরাধীর মেয়ে ছাত্রীসংস্থার সাবেক নেত্রী এবং জামাত থেকে আসা আওয়ামীলীগের এমপির বিরুদ্ধে লিখেছি । তখন বলতো , অহ বুঝছি । তুমি হইলা গিয়া "কলম মার্ডার" । আমি প্রথমে বুঝি নাই । "কলম মার্ডার" কি ? জেলখানায় বেশির ভাগ মামলারই কিছু উপনাম আছে । যেমন আমি গ্রেফতার হইছি , তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি আইনে আর আমার মামলার উপনাম "কলম মার্ডার" । মানে আমি লেখা দিয়া মার্ডার করছি । কলম দিয়াই যেহেতু লেখা তাই তারা নাম দিয়েছে এই "কলম মার্ডার" ।

আমি একদিন , ওয়ার্ড থেকে বাইর হইয়া , সিগারেট ফুকতাছি । যেখানে সিগারেট ফুকতাছি তার পাঁশে "কোরান দফা" । মানে এই ঘরে কোরান তেলোয়াত করা হয় । সকাল আটটা থেকে দুপুর বারোটা পর্যন্ত ।

কোরান দফা থেকে একজন ছেলে বের হইয়া (প্রায় আমার সমবয়সী) একটা পান নিলো বেশি কইরা জর্দা দিয়া । ছেলেটির পরনে সাদা জুব্বা , মুখে দাড়ি । তারপর আমার পাঁশে আইয়া জিগাইলো, ভাই কি মামলা ? আমি কইলাম, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ, আমি একজন রাজাকার যুদ্ধাপরাধী ও রাজাকার যুদ্ধাপরাধীর মেয়ে ছাত্রীসংস্থার সাবেক নেত্রী এবং জামাত থেকে আসা আওয়ামীলীগের এমপির বিরুদ্ধে লিখেছি ।

ছেলেটি বললো , আওয়ামীলীগ হইলো কুত্তার দল । এরা ইহুদি নসরা । এরা আলেম ওলেমাদার সম্মান দেয় না । আওয়ামীলীগ আলেম ওলেমা বিরোধি । আওয়ামীলীগ ইসলাম বিরোধি । কোন ঈমানন্দার মুসলমান আওয়ামীলীগ করতে পারে না । আওয়ামীলীগ করলেই জাহান্নাম নিশ্চিত । দেলোওয়ার হোসাইন সাইদির মতো একজন আলেমরে যুদ্ধাপরাধী কইয়া জেলে আটকায় রাখছে । কত্ত বড় জালিম এই আওয়ামীলীগ ! আল্লাহর গজব পড়বে এই হাসিনার উপর ! এই নাস্তিক সরকারের পতন একদিন হবেই হবে ! এই জালিম সরকারের পতন একদিন হবেই হবে ।- ইনশাআল্লাহ ।

ছেলেটি আমারে উপদেশের সহিত কইলো, ভাই জামাতের বিরোধিতা করেন সমস্যা নাই কিন্তু আলেমওলেমাদের বিরোধিতা কইরেন না । আল্লাহর গজব পড়বে । রাজাকার যুদ্ধাপরাধী কি আওয়ামীলীগে নাই ? তাদের বিরুদ্ধে লেখেন । আলেমওলেমাদের রাজাকার যুদ্ধাপরাধী কইলে আল্লাহর গজব পড়বে ।

আমি তারে জিগাইলাম ভাই আপনার কি মামলা , ছেলেটি কয় সে চাঁদগাও একটা মাদ্রাসায় হাফেজি পড়াইতো (মানে কোরান পড়াইতো) আর নামাজ কালাম শিখাইতো । ইসলামের দাওয়াত দিতো । কিন্তু স্থানীয় আওয়ামীলীগের লোকেরা এইটা সহ্য করতে পারতো না । তাই তারা ক্ষমতার জোর খাটাইয়া তার মতো একজন আলেমকে জেলে ঢুকাই দিছে । যেনো কোরানের আলো ছড়াইয়া না পরে ।

ছেলেটির মুখে এই কথা শুইনা আমি পুরাই তবদা খাইগেলাম । মনে মনে নিজের লজ্জা হইতে লাগলো । একজন লোক কোরান শিখায় নামাজ কালাম শিখায় আর তারেই আওয়ামীলীগ জেলে ঢুকাই দিলো ! আমিতো জানি আওয়ামীলীগ ইসলাম বিরোধি নয় । কিন্তু এখনতো যা শুনছি তাতে মনে হচ্ছে , আওয়ামীলীগ ইসলাম বিরোধি । ছেলেটির কথা শুইনা আমার নিজের উপর নিজেরই ঘৃণা হইতে লাগলো । কারণ আমি একজন আওয়ামীলীগ সমর্থক । আমি ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক চেতনা এবং জাতির পিতার আদর্শ মনে প্রাণে ধারন করি । লজ্জায় অপমানে আমার বলতে ইচ্ছা করছিলো , হে মাটি তুমি ফাঁক হয়ে যাও আমি ঢুকে যাই ! ছেলেটিকে আর কিছু না বলে , আমি চলে আসলাম আমার ওয়ার্ডে ।

ওয়ার্ডে আইসা বই নিয়া বসলাম । আমার পাশে একজন ছেলে এসে বলল, যে ছেলের সাথে কথা বলছো তুমি তারে চিনো ? আমি বললাম না । আইজই কথা হইলো । ছেলেটি বললো , ও আগে আমাদের এই ওয়ার্ডে থাকতো । এইখানে নামাজ পড়াইতো । এখন এই বিল্ডিংয়ের চারতলায় থাকে ১২ নং ওয়ার্ডে । সেখানে ইমামতি করে । আমি বললাম , ওহ । ছেলেটি বললো , তার মামলা কি জানো ? আমি বললাম , সে কইছে কোরান হাদিস শিখায় বলে তারে আওয়ামীলীগের লোকেরা ক্ষমতার অপব্যবহার কইরা জেলে ঢুকাই দিছে ।

ছেলেটি হাইসা দিয়া কয় , মাদারিচুদ আলা পোদাপোয়া । সেরা ভন্ড । আমি কইলাম কি কন! ছেলেটি কয় , সে চাঁদগাও'তে একটা মাদ্রাসায় হাফেজি পড়াইতো । হাফেজি পড়ানোর সময় একটা ছয় বছরের ছেলেকে তার অফিস রুমে ডেকে নিয়ে যায় । তারপর ছেলেটিকে বলৎকার করার সময় ছেলেটি চিৎকার দিলে বাকি ছাত্ররা দৌড়ে ভেতরে গিয়ে দেখে ছেলেটি কাপড় চোপড়হীন অজ্ঞান হয়ে পড়ে রইছে । হৈচৈ শুরু হলে আশেপাশের লোকজন চলে আসে । তারপর শুরু হয় ব্যাপক মাইর । মাইরের পর তাকে পুলিশের কাছে তুলে দেওয়া হয় । থানায় নিয়ে গেলে ছেলের বাবা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতনে তার বিরুদ্ধে একটা মামলা করে । সেই মামলায় হুজুর এখন প্রায় ১১ মাস জেলখাটছে । শালা "পাছা মার্ডার" । ভন্ডের ভন্ড ।

তারপর আমি বুঝতে পারলাম , একজন অপরাধী তার অপরাধ ঢাকতে ধর্মকে ঢাল হিসাবে কিভাবে ব্যবহার করে । কিভাবে আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে ধর্ম এবং ধর্মীয় অনুভিতিকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করে ।

ছেলেটির নাম জিয়াউর রহমান । বাবার নাম খুব সম্ভবত মাহবুব । বাড়ি পুকুরিয়া (চানপুর) , বাঁশখালী । মাদ্রাসা থেকে পড়াশুনা করে দীর্ঘদিন দেশের বাইরে ছিলো । হেফাজত ইসলামের সে একজন একটিভ কর্মী । আর এখন সে কর্ণফুলি বিল্ডিংয়ের চার তলায় ১২ নং ওয়ার্ডে ইমামতি করে । আর চব্বিশঘন্টা আওয়ামীলীগ এবং সরকারকে ইসলাম বিরোধি নাস্তিক কইয়া লোকোজনরে বুঝায় ।

আইচ্ছা এমন হুজুর কি বাঙালি জাতি কখনোই চাইছিলো ?

।। জেলখানার জিন্দেগী ।।

জেলখানায় যাওয়ার পর আমি ব্যাভাছ্যাকা খাইয়া বইয়া রইছি ওয়ার্ডে। বইয়া বইয়া আমার অসুস্থ মা আর ছোট তিন বোনের কথা ভাবতেছিলাম। এমন সময় আছরের নামাজের আজান দেয় গুটি ( ইয়াবা) মামলার আসামি করিম হুজুর। আযান শুইনা ওয়ার্ডের লোকজন যারা নামাজ পড়ে তারা বাথরুমের দিকে যাচ্ছে অযু করার জন্য। আর যারা নামাজ পড়ে না তারা হয় ওয়ার্ডে চুপচাপ বইয়া থাকে নইলে নিচে বারান্দায় আইসা বইয়া থাকে। নইলে সিগারেট বিড়ি ফুঁকে ফুঁকে আড্ডামারে।
আমি নিচের দিকে নামতে যাচ্ছিলাম। এমন সময় মোঃ শামসুল আলম আমাকে বলল, চৌধুরী সাব নামাজ পড়বেন না? আমি কইলাম, না আমি নামাজ পড়বো না। শামসুল আলম আবার জিগাইলো, ক্যা? আমি কইলাম, ভাই আমার মন নামাজ পড়তে চাচ্ছে না এখন। মন চাইলে নামাজ পড়তাম। শামসুল আলম কইলো, মনের বিরুদ্ধে জিহাদ করেন। আমি কইলাম, ভাই আমি মনের বিরুদ্ধে জিহাদ প্রত্যেকদিনই করি বাট জিহাদে মন জিতে যায় বারবার আর আমি হেরে যায়। এইবার শামসুল আলম আমার হাতটা ধইরা কয়, ভাইরে জেলখানায় আছি আমরা। আল্লাহ ছাড়াতো আর কেহ নাই। আল্লাহ'রে না ডাকিলে জামিন হইবে কেমনে? আমি কইলাম, ভাই জামিন হইবে কেমনে- এইডা জানি না তবে একটা কথা জানি আল্লাহ আমারে খুবই ভালোবাসেন। তাই আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন আমার জামিন হইয়া যাইবে। আমি উইঠা নিচের দিকে হাঁটা দিলাম।
দেখি আমার লগে লগে শামসুল আলমও আসতাছে। আমি কইলাম, ভাই আপনি নামাজ পইড়া আসেন। আমি নিচে আছি। শামসুল আলম কয়, ভাই আপনারে আইজ একটা কথা কইবো। আমি কইলাম নামাজ পইড়া বইলেন। শামসুল আলম কয়, নামাজ পরে পড়বো। আগে কথা শুনেন। আমি কইলাম, চলেন।
বারান্দায় আমি আর শামসুল আলম। সিগারেট ফুঁকতাছি। শামসুল আলম কয়, ভাই বিশ্বাস করবেন কি না জানিনা। আমি মাত্র দেড় হাজার টাকা দিয়া গুটি ব্যবসা শুরু করেছিলাম। আইজ আমার কক্সবাজারে বাড়ি আছে, টেকনাফে বাড়ি আছে। বউ আছে দুইটা। একটা কক্সবাজার আরেকটা আমার পুরান বাড়ি টেকনাফে থাকে। আমার মেয়েরে আমি কক্সবাজার থেকে বিমানে করে ঢাকায় আনি ঈদের শপিং কইরা দিতে। আমি কিন্তু ইংরেজি পড়তে জানি না। আমার মাইয়া নাইনে পড়ে সে সব পড়তে পারে। আমার মাইয়া'ই টিকেটের ইংরেজি পইড়া আমারে দেখাইয়া দে বিমান কোনটা।
জায়গা কিনছি দুইকানি। ধার দেনা ছিলো প্রায় আড়াই লাখ তাও শোধ করছি। অস্ত্র কিনছি দুইটা। একদিন মা আইসা কয়, তোর এখন এতো টাকা! আল্লাহ যদি আমার হজ্বটা নসিবে রাখতো! মা'রে কইলাম, মা আমারে একটা মাস সময় দাও আমি হজ্বের টাকা জোগাড় করি।
পরের সাপ্তাহে এক লাখ গুটি নিয়া আল্লাহর নামে রাওনা দিলাম টেকনাফ থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে। মনে মনে নিয়ত করলাম এই গুটি বেইচ্ছা যা টাকা পাবো তার সবটুকু আমার মা'র হজ্বের জন্য ব্যয় করবো। আমার সাথে আরো চারজন ছিলো। তারও গুটি ব্যবসায়ী। আমরা পাঁচজন পাঁচ গাড়িতে উঠলাম। কিন্তু কি আল্লাহর রহমত চাইরজনই ধরা খাইছে। কিন্তু আমি ধরা খাইনাই। অথচ আমার গোটা গাড়ির সবাইকে চেক করলো আমারে চেক করে নাই। আমারে চেক করতে গেছিলো এমন সময় পেছন থেকে একটা ট্রাক এসে ধাক্কা মারে গাড়িতে। এবং এইডা লইয়া ট্রাক ড্রাইভার আর বাস ড্রাইভারের লগে লাইগলো ক্যাচাল আর ক্যাচাল থামাইতে পুলিশ ব্যস্ত হইয়া নাইমা গেলো। আর আমি পার পাইয়া গেলাম।
আল্লাহ'রে না ডাকলে কোনদিন কামিয়াব হওয়া যাবে না। আপনি চুরি করেন ডাকাতি করেন গুটি বেঁচেন সমস্যা নাই কিন্তু নামাজ না পড়লে সমস্যা আছে। নামাজই হইলো সব। যার নামাজ নাই তার জন্য বেহেস্তও নাই। বুঝলেন ভাই? আমি কইলাম, বাঙলায়তো কইলেন না বুইঝা উপায় আছে!
আইচ্ছা ভাই, আপনার মা'কে হজ্ব করাইছিলেন?
শামসুল আলম কয়, হ্যাঁ আমার মা'কে হজ্ব করাইছি।
শামসুল আলম দুই হাজার গুটি লই ধরা খাইছে আকবর শাহ থানায়। এখন সে কর্ণফুলী চার নং ওয়ার্ডে প্রায় এগারো মাস ধরে হাজত কাটছে।

।। জেলখানার জিন্দেগী ।।

।। জেলখানার জিন্দেগী ।।

জেলখানায় একটা "কোরান দফা" আছে । এইখানে কোরান পড়ে হাজতিরা । তার পাশে একটা দোকানে পান সিগারেট বেঁচে । আমি এক খিলি পান আর একটা ডারবি সিগারেট দোকান থেকে নিয়া খুব আরামচে সময় নষ্ট করছিলাম ।

কোরান দফা থেকে একজন হুজুর বের হইয়া এক খিলি পান নিয়া আমার পাশে দাঁড়াইয়া পান চিবাইতেছিলো । আমি অবাক হইয়া ভাবতে ছিলাম , একজন হুজুর জেলখানায় থাকবে কেন?

হুজুররে জিগাইলাম , হুজুর মামলা কি ? হুজুর কইলো , গুটি (ইয়াবা) । বুঝলাম গুটি নিয়া ধরা খাইছে । হুজুররে পাল্টা জিগাইলাম , হুজুর ধরা খাইছেন ক্যামনে ? হুজুর কয় , টেকনাফ থেকে একটা হানিফ বাস রিজার্ভ কইরা সাতান্নজন তবলিগে যাইতেছিলো । গাড়ি মইজ্জার টেক আইলে পুলিশ তাদের গাড়ি থামাইয়া তল্লাশি করতে চায় । গাড়ির ভেতরের সকল হুজুররা বলে , তারা আল্লাহর রাস্তায় যাইতেছে তাদের কাছে কোন অবৈধ কিচ্ছু নাই । তাদের ব্যাগে যা আছে তা কোরান হাদিস আর কিছু জামা কাপড় । পুলিশ কয় , তাদের কাছে স্ট্রং ইনফরমেশন আছে এই গাড়িতে করে বিপুল সংখ্যক ইয়াবা ঢাকায় পাচার হচ্ছে ।

বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে পুলিশ হুজুরদের বলে , যাদের ব্যাগে কোরান হাদিস আছে তারা যেনো কোরান হাদিস হাতে নিয়া নে । আর বাকি জামা কাপড় যেনো নিচে বিছানো চাদরে ডাইলা দে । পুলিশ প্রত্যেকের জামা কাপড় এবং ব্যাগ চেক করবে ।

এতে বেশির ভাগ হুজুর রাজি হয় । এবং তারা তাদের জামা কাপড় চাদরে ডাইলা দে । পুলিশ একেক করে সব জামা কাপড় এবং ব্যাগ তল্লাশি করে । এবং সাতজনের কাছে প্রায় ৫ লাখের মতো ইয়াবা পায় । এবং যাদের কাছে ইয়াবা পায় তারা সকলেই টেকনাফের একটা স্থানীয় মাদ্রাসার কোরানে হাফেজ । পুলিশ সাতজনকে গ্রেফতার কইরা জেলখানায় পাঠাইয়া দে । আর বাকিদের তবলিগে যাওয়ার জন্যে গাড়ি ছাইড়া দে ।

আমি হুজুরের মুখ থেকে এই কাহিনী শুইনা হুজুররে জিগাইলাম , হুজুর ইয়াবা ব্যবসাতো হারাম । আপনি একজন কোরানে হাফেজ হইয়া এই ব্যবসা করতাছেন কিয়ামতের দিন আপনি আল্লাহকে কি জবাব দিবেন ? হুজুর কয় , আমি হালাল টাকায় ব্যবসা করছি । আমিতো আর ইয়াবা খাচ্ছি না । আর ইয়াবাতো একটা মেডিসিন । আমিতো ওষুধ হিসাবে বিক্রি করতেছি । মাদক হিসাবে না ।

হুজুর আমিতো জানি ইয়াবা একটি মাদক । হুজুর কয়, আমি মাদকের নিয়তে বিক্রি করতেছি না আমি ওষুধের নিয়তে ব্যবসা করছি । আর কোরানের কোথাও ইয়াবা সম্পর্কে বলা হয় নাই । কোরানে বলা হয়েছে মদ আর গাঁজা সম্পর্কে । আমিতো আর মদ গাঁজা বিক্রি করছি না ।

ইয়াবা যারা মাদকের নিয়তে খাচ্ছে তাদেরই কৈফিয়ত দিতে হবে । যারা ওষুধের নিয়তে ব্যবসা করছে তাদেরকে হাশরের ময়দানে কৈফিয়ত দিতে হবে না ! আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন আর সুদকে হারাম করেছেন। আমি হালাল টাকায় হালাল নিয়তে ইয়াবা ব্যবসা করছি । আমি সুদ খাচ্ছি না । আমি স্রেফ ইয়াবা ব্যবসা করছি । আমার কৈফিয়ত দেওয়ার প্রশ্নই আসে না !

তারপর হুজুর আমারে জিগাই, ভাই আপনার মামলা কি ? আমি কইলাম , হুজুর তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি আইন । হুজুর কয়, ওহ বুঝছি । আপনি ব্লগার ? আমি কইলাম , হুম । হুজুর কইলো, আপনি নাস্তিক । আপনার লগে কথা কইলেও গুনা । ব্লগাররা জাহান্নামে যাইবে । আপনি ফি নারে জাহান্নাম ।

আমি কইলাম , হুজুর ব্লগাররা জাহান্নামে যাইবে এইডা কি কোরানের কোথাও আছে ? হুজুর কইলো, কোরানে নাই এমন কোন কিছুই দুনিয়াতে নাই ।

হুজুর পান চিবাইতেছে আর আমি সিগারেটের শেষ টানটা মাইরা আমার ওয়ার্ডের দিকে হাঁটা দিলাম ।

হুজুরের নাম, মুহাম্মদ আবদু সত্তার । বাড়ি কলেজ রোড টেকনাফ । থাকে পদ্মা আটারোতে ।

শুক্রবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

।। জেলখানার জিন্দেগী ।।

জেলখানায় একটা লোকের সাথে আমার বেশি সখ্যতা হইছিলো । লোকটার বাড়ি উখিয়া থ্যাইংখালী । লোকটার নাম আবু তাহের । বয়স আনুমানিক ৩৮ বছর । স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক । দুই হাজার গুটি (ইয়াবা) লইয়া ধরা খাইছে মইজ্জ্যার টেক । ৬ মাস ধরে জেল খাটছে । মেজিস্ট্রেট কোর্ট জজ কোর্ট জামিন দেয় নাই । তার মামলার ফাইল এখন হাইকোর্টে ।
সখ্যতা বেশি হওয়ার কারণটা বলি । পাকিস্তান ভারতের খেলা চলছে বিটিভিতে । আইসিসি ওয়ার্ল্ড কাপের ফাইনাল খেলা। আমরা সকল ওয়ার্ডবাসী খেলা দেখছি । আমি ভারত সাপোর্টার । আর বাকি সকলেই পাকিস্তান সাপোর্টার । আমি মুসলমান ঘরে জন্ম লইয়া কেনো হিন্দু রাষ্ট্র ভারতকে সাপোর্ট করছি এই জন্যে সকলেই আমাকে টিপ্পনি খাটতে লাগলো । বিপরীতে আমি তাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরছি । কিন্তু তারা তা বুঝতেও চায় না শুনতেও চায় না । তাদের কথা পরিস্কার ফকফকা । বাঙলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম পাকিস্তানের রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম । মুসলমান মুসলমানের পক্ষে থাকবে হিন্দুর পক্ষে নয় । খেলা শেষে যখন পাকিস্তান জিতে গেলো তখন , সবার টিপ্পনী কাটার মাত্রাটাও বেশি হয়ে গেলো ।
পাকিস্তানী সাপোর্টারের কথার গুঁতায় আমি কাহিল হইয়া একটা বই নিয়া পড়তে বসছি । কিছুক্ষন পর আবু তাহের আমার পাশে আইসা ফিসফিসাইয়া কয়, একাত্তরে পাকিস্তানীরা কতো নির্যাতন করছে এই বাঙালিরে অথচ আইজ এই বাঙালিই দেশের ভিতর বুক চাপড়াইয়া পাকিস্তানের পক্ষে কথা কয় । এইসব কথা আমি ওয়ার্ডে কই না । ওয়ার্ডের এরা বেশির ভাগই অশিক্ষিত । আমি যদিওবা পড়ালেখা বেশি করি নাই ! কিন্তু তারপরেও আমি দেশের জন্ম ইতিহাস জানার চেষ্টা করছি । আপনি মন খারাপ কইরেন না । আমিও কিন্তু ভারত সাপোর্টার । আপনার মতো প্রকাশ্যে করি না মনে মনে করি । আজকে যদি ভারত জিততো তাইলে আমি কিন্তু খুশি হইতাম ।
আমি সেদিন তার সাথে আর কোন কথা বলি নাই । পরের দিন সকালে আমি আর আবু তাহের বিল্ডিংয়ের নিচে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কথা বলছি । প্রায় ২০ মিনিট যাবত । এমন সময় একজন লোক এসে বলল, আমাদেরকে মেট- এ ডাকে । (ওয়ার্ডটি যার দায়িত্বে থাকে তাকে মেট বলে । মেট'ই হচ্ছে একটি ওয়ার্ডের সর্বসর্বা) । আমি আর আবু তাহের দুইজনই তড়িঘড়ি করে ওয়ার্ডে চলে আসছি । ওয়ার্ডে এসে দেখি থমথমে অবস্থা । সবাই যার যার সিটে আওয়াজ ছাড়া বইসা আছে । মেট আবু তাহেরকে জিজ্ঞাস করলো , তুই নতুন পোলা (আমার দিকে আঙ্গুল দিয়া ইশারা কইরা) ইতার লগে এতো কথা কি ? আবু তাহের আমতা আমতা কইরা কয় , কিছু না বদ্দা (বড় ভাই) আমরা এমনিতেই কথাবার্তা বলছিলাম । মেট বসা থেকে উইঠা , লাথি ঘুষি কিল চড় থাপ্পড় দিতে দিতে কয় , তুই জানস না জেলখানায় নতুন আসামীর সাথে কথা বলা যায় না ! তোদের ফাইলের সময় আমি বলি নাই ! আবু তাহের বদ্দা বদ্দা... ছাড়া আর কিছুই বলবার সুযোগ পাইতেছেনা । শুধুই মাইর চলতেছে ! আমি বেকুব বইনা গিয়া হাঁটু বুকে লইয়া বইয়া থাকলাম ।
মেট আবু তাহেরকে মাইরা আমার কাছে আইসা কয় , ইতার কোন দেখা নাই সাক্ষাৎ নাই (কেউ দেখতে আসে না ) । সিটের টাকা পাবো এক হাজার টাকা সেইটা দিতে পারতেছেনা । নতুন কেউ আসলে ভাউ দিয়া টাকা পয়সা হাতাইতে চায় । ইতার থেকে দূরে থাকবা । কোন কথা বলবা না । আমি আইচ্ছা কইয়া জুবুথুবু হই বইসা রইলাম !
আবু তাহেরকে কঠোর ভাবে নিষেধ করে দেওয়ার পরেও সে আমার সাথে লুকিয়ে লুকিয়ে কথা বলতো । আওয়ামীলীগ করার কারনে তাকে এলাকার অশিক্ষিত কুশিক্ষিত কুসংস্কারাচ্ছন্ন এবং ধর্মান্ধ উগ্রবাদীরা কিভাবে মানসিক নির্যাতন করতো তা বলতো । আমি তার কথা শুনতাম আর হ্যাঁ হু করতাম । আর আমি বুঝতে পারতাম আমার সাথে তার এই সখ্যতা কেবলই বিড়ি খাওয়ার জন্য । কারণ তার দেখা নাই (সাক্ষাৎ করতে কেউ আসে না ) । জেলখানায় সরকারি ভাবে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা হলেও সরকারি ভাবেতো আর বিড়ি খাওয়া যায় না ! বিড়ি খাইতে হইলে ক্যাশ টাকা লাগে । আর সেই ক্যাশ টাকা তার নাই ।
আমি সকালের ভাত খেয়ে একটা সিগারেট জ্বালিয়ে ওয়ার্ড থেকে নিচে নেমে বারান্দায় বই পড়তে আসি প্রত্যেকদিন । আবু তাহের সকালের রুটি আর মিঠা নিয়ে বারান্দায় আমার পাশে বসে খায় । উদ্দেশ্য তার খাওয়া শেষ হইলে আমার সিগারেট থেকে ভাগ নিতে পারবে । আর আমিও তারে না দিয়ে খায় না ।
এইভাবে দুই একদিন যাওয়ার পর আমি আবু তাহের সম্পর্কে একটা ধারনায় আসলাম । এই লোকটি নিন্মমধ্যবিত্ত জীবন যাপনের একজন আওয়ামীলীগ সমর্থক । আওয়ামীলীগরে ভালোবাসে । সে চায় মনে প্রাণে মুক্তিযুদ্ধের ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক চেতনা এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এই বাঙলাদেশে কায়েম হোক । কিন্তু অভাবের জন্য জেলখানায় বিড়ি খাইতে পারছে না । তাই সে এর ওর কাছে বিড়ি খুইজা খায় । আর এই খুইজা খাইতে খাইতে তার মান ইজ্জত হারাইছে । আমি চিন্তা করলাম এই লোকের যদি বিড়ির অভাব দূর করা যায় তাইলে এরে দিয়া কিছু কাজ করাইতে পারবো ।
আবু তাহেরকে হুমায়ন আহমেদের " শঙ্ঘনীল কারাগার" বইটা দিয়ে কইলাম , আপনি যদি এই বই ৫০ পাতা পড়তে পারেন আজ এবং কালকের ভিতরে তাইলে আপনি ১২ টা বিড়ি পাইবেন । আর যদি পুরা শেষ করতে পারেন তাইলে এক বান্ডি বিড়ি পাইবেন । আবু তাহের কয় ঠিকাছে আগে বিড়ি দেন তারপর পড়বো । আমি কই , আগে পড়েন তারপর বিড়ি । যদি পড়া শেষ করার পর আপনি বিড়ি না দেন তাইলে ? আমি কইলাম , ভাই আমি জবানে এবং ঈমানে ঠিক । আমি যা কইবো তা অবশ্যই পালন করবো । বাঙলাদেশের কসম । তবে আমি কিন্তু আপনার থেকে জিজ্ঞাস করবো যা পড়ছেন তার সম্পর্কে । আবু তাহের রাজি হইলো ।
সে বই পড়ে আর আমি তাকে বিড়ি দিই । একটা বই পড়তে পারলে এক বাড্ডি বিড়ি আর এক কাপ চা ।
প্রথম বই পড়ার পর তার ভেতর একটা অভূতপূর্ব পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম । সে বলে , এই বই পড়ে আমার বহুত কিছু পরিবর্তন আসছে মনমানসিকতায় । আপনি আমাকে আরো কয়েকটা বই আইনা দেন । আমি কই, বিড়ি খাওয়ার জন্যে নাকি মন মানসিকতা পরিবর্তন করার জন্য । কয়, দুইটায় ।
এইভাবে "নন্দিত নরকে" "হিমু সমগ্র" "বেকারত্বের দিন গুলিতে প্রেম" "তিথির নীল তোয়ালে" "অথচ আজ বসন্ত" এবং "মা" পড়ার পর তারে কইলাম , তাহের ভাই আপনি যদি , এই দেয়ালে (বারান্দার দেয়াল)
হিন্দু
মুসলমান
বৌদ্ধ
খৃষ্টান
ভুলে যান
পরিচয় এক্কান
"বাঙালি"
- এই কথা লিখতে পারেন তাইলে আমি আপনাকে লেখা শেষ হওয়া মাত্রই এক বান্ডি বিড়ি আর এক কাপ চা খাওয়াবো । আবু তাহের খুশি হইয়া কয় , একটা বই পড়তে দুই তিন দিন লাইগা যায় আর এতো মাত্র ত্রিশ মিনিটের কাম । আমি কইলাম তাইলে লেখা শুরু করেন ।
বারান্দা থেকে বের হয়ে সে একটা লাল ইটের টুকরা নিয়ে এলো । বারান্দার দেয়ালে সাদা চুন দেওয়া । তাই লাল রঙের ইটের ঠুকরা দিয়ে লিখবে । আমি কইলাম , তাহের ভাই আমি আগে লিখে দিই আপনি সেই লেখার উপরে বারবার লিখতে থাকবেন । আমি লিখে দিলাম তারপর সেই লেখার উপর বারবার লিখে আবু তাহের চিকা সম্পন্ন করলো । আর আমিও তার ঘাম না শুকাবার আগেই বিড়ি দিয়ে দিলাম আর লেখা শেষে চা খাওয়াইলাম । জেলখানায় এক বান্ডি আকিজ বিড়ি ত্রিশ টাকা আর এক কাপ চা (আমরা টং দোকানে যে চা খাই তার তিন ভাগের একভাগ চা পাঁচ টাকা)
আবু তাহের আর আমি কর্নফুলি বিল্ডিংয়ের বারান্দায় প্রায় ১৩টা চিকা মারি । এবং এই প্রত্যেকটি চিকার জন্যে আবু তাহেরকে বিড়ি আর চা খাওয়াইছি জবান মতো । চিকাগুলো হইলো...
চিকা-২।
আসুন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ফেরত যাই
আমরা জাতির পিতার রক্ত
বাঙলাদেশের ভক্ত ।
চিকা-৩।
দুই লাখ মা বোনের ইজ্জত
ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত
ভুলি নাই ।
দেশ প্রেম না থাকিলে ঈমানদার হওয়া যাইবে না ।
চিকা-৪।
নামাজ পড়বেন
অন্যের বিরুদ্ধে নামাজকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করবেন না ।
চিকা-৫।
ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যারা ধর্মকে ব্যবহার করে তারা ধার্মিক নয় । তারা ভন্ড ।
চিকা-৬।
কোন ধর্মই ছোট নয়
যারা অন্যের ধর্মকে ছোট করে দেখে তারা ধার্মিক নয় । তারা ঝামেলাবাজ ।
চিকা-৭ ।
ধর্মের চাইতে মানুষ বড়
মানুষের চাইতে দেশ বড়
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়
বাঙলাদেশ গড় ।
চিকা-৮।
যারা জাতীয় সংগীত গায় না
যারা জাতীয় পতাকাকে সম্মান দেয় না
তারা দেশপ্রেমিক নয়
তারা দেশদ্রোহী
তাদের ঘৃণা করতে হবে ।
চিকা-৯ ।
অসাম্প্রদায়িক চেতনা
বাঙালি জতির প্রেরণা
চিকা-১০।
পাকিস্তানপ্রেমীরা দেশপ্রেমিক নয়
১৯৭১ ভুলি নাই ।
চিকা-১১।
জয় বাঙলা কোন দলীয় স্লোগান নয়
জয় বাঙলা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সকল বাঙালির প্রাণের স্লোগান ।
চিকা-১২ ।
সবার আগে "দেশ"
তারপর "মানুষ"
তারপর "ধর্ম"
হে মানব সমাজ
চিন্তা করে দেখলে
বুঝিবে এই কথার মর্ম ।
চিকা-১৩।
যারা নিজেদের অপরাধ ঢাকতে ধর্মকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে
তারা ধার্মিক নয়
তারা ভন্ড ।
পাঁচতলা বিল্ডিংয়ে প্রায় ৮০০ জন লোক থাকে । তাদের মধ্যে গড়ে প্রায় ৫০০জন লোক দিনের বিভিন্ন সময়ে বারান্দায় হাঁটতে আসে । তারা কেউ এই চিকাগুলো পড়ে চিন্তা করে আবার কেউ এই চিকা পড়ে গালাগালি করে আবার কেউ এই চিকা পড়ে ভালাও কয় না খারাপও কয় না ! তবে এই চিকাগুলোর কারনে ওয়ার্ডে একটা প্রভাব পড়ছে । ওয়ার্ডের যেসব লোক মুক্তিযুদ্ধ , জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং আওয়মীলীগ নিয়া কুটুক্তি করতো প্রকাশ্যে তারা আর প্রকাশ্যে করে না । এবং কিছুটা চুপ গেলো ।
জেলখানার দেওয়ালে লেখালেখি করা অন্যায় । কে লিখছে কইতে পারলে ব্যাপক ঝামেলা পোহাইতে হইবে । তার উপর মাইরতো আছেই । তবে জেলখানায় সচরাচর কেউ বিচার দেয় না কেউ সাক্ষীও দেয় না । কারণ বিচারের সাক্ষী যে হইবে তাকেও পাছার উপর দুই ডান্ডাবারি নিতে হইবে ।- আমি এমনটি শুনেছি তবে দেখিনি । যে সাক্ষী দিবে তাকে কেনো মারবে ?
কিন্তু প্রত্যেকটি বিল্ডিংয়ের দেয়ালে প্রেমিক প্রেমিকার নাম , মোবাইল নাম্বার , জেলখানায় আগমনের তারিখসহ বিভিন্ন কিছু লিখে রাখছে বিভিন্ন লোকজন । আমি এইসব লেখাগুলো দেখে চিন্তা করলাম তাদের লেখাগুলোর চাইতে আমার চিকা গুলো বহুত মূল্যবান ।
আবু তাহের বারান্দায় এসে চিকা গুলোর দেখাশুনা করতো । কেউ মুচে দিচ্ছে কিনা অথবা কেউ দেয়ালে হেলান দিলে অজন্তে মুচে যায় কিনা ! যদি মুচে যায় তাহলে সে আবার লিখে দিতো । একদিন একটি চিকা মুচে দিয়েছিলো একজন হুজুর । তার বাড়ি টেকনাফ । নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় ৪ বছর ধরে জেল খাটছে । কর্ণফুলি তিন নং ওয়ার্ডে । ঘরে বউ থাকার পরেও মক্তবে পড়তে আসা ৭ বছরের একটি মেয়েকে ধর্ষণ করতে গিয়ে ধরা পড়েছে ।
সে মুচে দিয়েছিলো "কোন ধর্মই ছোট নয় যারা অন্যের ধর্মকে ছোট করে দেখে তারা ধার্মিক নয় । তারা ঝামেলাবাজ ।"- এই চিকাটি।
কিন্তু আবু তাহের সেটি আবার বড় করে লিখে দিয়েছে । আর আমার কাছে এসে বলে , ভাই এই চিকা কেউ যদি আমাদের সামনেও মুচে দেয় আমরা কিছুই কইতে পারবো না । কারণ আমরা যা করছি তা জেল কোডের লঙ্ঘন । তাই বিচার দিতে পারবো না আর মারামারিও করতে পারবো না । তবে একটা জিনিষ করতে পারবো যতোবার মুচে দিবে অথবা মুচে যাবে আমরা ততোবার লিখে দিবো । আমি কইলাম ঠিকাছে !
আমার জামিনের সময় তাহের ভাই আমার কাপড় চোপড়ের বস্তা লইয়া আমাকে মেইন গেইট পর্যন্ত আগাইয়া দিতে আসছিলো । আর ওয়াদা করেছিলো , সে যতোদিন থাকবে ততোদিন চিকাগুলোর হেফাজত করবে । আর বাইর হইতে পারলে সে এই চিকাগুলো তার ওয়ার্ডের বিভিন্ন স্কুল কলেজ এবং মাদ্রাসার দেওয়ালে লিখে দিবে । তার কাছে আমি ছিলাম এক বিচিত্র কিসিমের লোক ! যে জেলখানায় পকেটের পয়সা খরচ করে বিড়ি আর চা খাওয়াইয়া মানুষকে বই পড়ায় । জেলখানায় টাকার বহুত মূল্য ! টাকা নষ্ট করে কয়জন !
আমার জামিনের দুই দিন আগে তাহেরের বাড়ি থেকে তার জন্যে দুই হাজার টাকা পাঠাইছে । তাই আমি জামিন হইয়া বাইরে আইলেও আবু তাহেরের আর বিড়ি আর চা'র অভাব পড়বে না । দীর্ঘ আড়াইমাস আবু তাহের জেলখানায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং আদর্শ কায়েমে আমার সহযোগী হিসাবে ছিলো ।
আবু তাহেরের জন্য ভালোবাসা

বুধবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

৫৭ ধারা একটি কালো আইন । ৫৭ ধারা বাতিল করো ।

৫৭ ধারায় বলা হচ্ছে...
"ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে মিথ্যা ও অশ্লীল কিছু প্রকাশ করলে এবং তার কারণে মানহানি, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগলে বা কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উসকানি দেওয়া হলে তা অপরাধ বলে গণ্য হবে।"
তার মানে, ইলেকট্রনিক মাধ্যমে মিথ্যা, অশ্লীল বা মানহানিকর তথ্য প্রকাশ সংক্রান্ত অপরাধ এই ধারায় গণ্য হবে।
ধরুন, এক লোক চোর । সে আবার সমাজের ক্ষমতাবানও । কারণ সে এলাকার চেয়ারম্যান । সে মুলত সরকারের চাল চুরি করে খায় । কিন্তু সে যে চোর তা এলাকার বেশির ভাগ মানূষ জানে না । তবে কেউ কেউ জানে । যারা জানে তারা সেই ক্ষমতাবান চোরের ভয়ে সামনা সামনি চুরির প্রতিবাদ করতে পারে না আবার সমাজের অন্য লোকদেরকেও চুরির বিষয়টি জানিয়ে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করতে পারে না ।
এমতাবস্থায় যদি কেউ একজন অনলাইনে একটি ফেইক আইডি খুলে অথবা রিয়েল আইডি দিয়ে সঠিক তথ্য উপাত্য হাজির করে সেই ক্ষমতাধর চোরের বিরুদ্ধে লেখালেখি করে তাহলেও এই ৫৭ ধারায় তা অপরাধ হিসাবে বিবেচিত হইবে ।
ক্ষমতাধর চোর লোকটি থানায় গিয়া যদি বলে , অমুক আইডি থেকে অমুক লোকটি আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে আমার সামাজিক , সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং ব্যাক্তিগত মানহানি করেছে । তাহলে থানা ফেইক আইডি অথবা রিয়েল আইডির মালিককে ৫৭ ধারায় গ্রেফতার করতে পারে । অপরাধ প্রমাণিত হওয়া না হওয়া পরের ব্যাপার । কিন্তু ক্ষমতাধর চোর চেয়ারম্যানের মান বাঁচাইতে থানা আইডির মালিককে এই কালো আইনে গ্রেফতার করতে পারবে । এই আইনে সেই ক্ষমতা দেওয়া হইছে । চোর চোরই থাকবে মাঝখান থেকে একজন চুরির প্রতিবাদকারী নিরীহ নাগরিক হয়রানির শিকার হবে ।
তারপর এই আইনে বলা হচ্ছে অশ্লীল কিছু প্রকাশ করলে...
আইচ্ছা কোনটা শ্লীল কোনটা অশ্লীল তার সীমারেখা কে ঠিক করে দিবে ? কারো কাছে শব্দ করে ভাত খাওয়াটা শ্লীল আবার কারো কাছে শব্দ করে ভাত খাওয়াটা অশ্লীল । কারো কাছে ভাত খাওয়ার পর সেই প্লেইটে পানি দিয়ে ধুয়ে সেই পানি খাওয়াটা শ্লীল আবার কারো কাছে তা বেশ গা গিনগিনে ব্যাপার । আবার কোন কোন পরিবারে মেয়েদের ছোট ছোট জামা কাপড় পরা বেশ ফ্যাশন্যাবল এবং বেশ অভিজাত্যের প্রতীক আবার কারো কারো কাছে তা বেশ অশ্লীল । কারো কারো কাছে বড় করে পাদ দেওয়া অশ্লীল কিছুই নয় আবার কারো কারো কাছে তা বেশ অশ্লীল ।
এখন যদি কোন ব্যাক্তি যে শব্দ করে ভাত খায় , যে ভাত খাওয়ার প্লেইট ধুয়ে পানি খায় , যে পরিবারের মেয়েরা ছোট জামা কাপড় পড়ে , যে ব্যাক্তি বড় করে পাদ দেয় তাদের বিরুদ্ধে লেখে কোন ফেইক আইডি বা রিয়েল আইডি থেকে এবং ওই সকল ব্যাক্তি যদি থানায় গিয়ে অভিযোগ করে তাহলেও ৫৭ ধারায় আইডির মালিককে গ্রেফতার করা যাইবে । কারণ এই আইনে সেই সুযোগ দেওয়া হয়েছে ।

আবার এই আইনে যারা গ্রেফতার হয় তাদের বিচার করাও কিন্তু বেশ কঠিন । কারণ তথ্য প্রমান সব গায়েব হয়ে যাওয়ার যথেষ্ট সুযোগ আছে । যেমন ধরুন কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগকৃত কোন আইডির বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে আইডির মালিককে গ্রেফতার করা হইলো । আইডিতে যেসব লেখা আছে তা প্রিন্ট করে এজহার দাখিল করা হইলো আদালতে । বিচার চলার সময় দেখা গেলো যে আইডির বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে সেই আইডিটি অনলাইন দুনিয়ায় নাই । আইডিটি ডিয়েক্টিভ । অথবা আইডি আছে কোন লেখা নাই । অথবা আইডির নাম ছিলো একটি এখন আইডির নাম হয়ে গেলো আরেকটি । এই অবস্থায় বিচারক কি সাজাদিবেন । অভিযুক্ত আইডির যে লেখাগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হইছে সেই লেখা সেই আইডি যদি কোন কিছুই অনলাইনে না থাকে তাহলে অভিযুক্ত ব্যাক্তি জামিনে অথবা বেকুসুর খালাসে বের হয়ে আসবে এটাই স্বাভাবিক । কিন্তু হয়রানির স্বীকার হয় এটা সত্য ।

আমরাতো জানিই , ফেইসবুক কতৃপক্ষ ডিয়েক্টিভ আইডির তথ্য কাউকে দেয় না এমনকি সরকারকেও না । ফেইসবুক ইউজারের সাথে গোপনীয়তা রক্ষায় ওয়াদাবদ্ধ । যদি কোন ইউজার তার আইডি ডিয়েক্টিভ করে দেয় অথবা কোন লেখা ডিলিট করে দেয় অথবা আইডির নাম পরিবর্তন করে দেয় তাহলে তা ফেইসবুক কতৃপক্ষ কখনোই কাউকে দেয় না ।
৫৭ ধারা আইন অনলাইন এক্টিভিষ্টদের হয়রানি ছাড়া অন্য কিছু করতে পারে না । এই আইনের মাধ্যমে অপরাধীদের অপরাধ গোপন রাখার বৈধতা দিয়েছে । অপরদিকে নিশ্চিত করেছে অনলাইন এক্টিভিষ্টদের হয়রানি ।

৫৭ ধারা একটি কালো আইন ।
৫৭ ধারা বাতিল করো ।

৫৭ ধারা আর আমি ।

৫৭ ধারায় আমি গত ১৪ জুন ২০১৭ থেকে গ্রেফতার হয়ে ৩১ আগস্ট ২০১৭ পর্যন্ত দীর্ঘ ( আড়াই মাস) কারাবন্দি ছিলাম । বর্তমানে হাইকোর্ট থেকে জামিনে আছি ।
আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিলো , একজন রাজাকার যুদ্ধাপরাধী আর একাত্তরের রাজাকার যুদ্ধাপরাধীর মেয়ে ও ছাত্রীসংস্থার সাবেক এক্টিভ কর্মী এবং ঘাতক দালাল জামাত থেকে আসা আওয়ামীলীগ এমপির বিরুদ্ধে লেখালেখি করেছি । Nagor Ali এবং Gipsy Rudro আইডি দিয়ে ।
অথচ অনলাইনে সার্চ দিয়ে দেখলে দেখা যায় , Nagor Ali নামে যে কয়টি আইডি আছে সেই সব আইডিতে এমন কোন ধরনের লেখা নাই । যে লেখা গুলো অভিযোগ হিসাবে আনছে আমার বিরুদ্ধে । আর সবচাইতে বড় কথা Nagor Ali নামের আমার কোন আইডি নাই । আমার একটাই আইডি ফেইসবুকে Gipsy Rudro । যেটি আমি নিজেই চালাই । এই আইডি থেকে আমি অভিযোগ দাতাদের নামে কিচ্ছু লিখি নাই ।
যে লেখাগুলো আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ হিসাবে দাঁড় করানো হইছে সেই সব লেখা আমি লিখি নাই । অন্যজনের লেখার সাথে আমার নাম এডিট করে বসানো হইছে ফটোশপের মাধ্যমে । নইলে আমার একমাত্র ফেইসবুক আইডি Gipsy Rudro'র টাইমলাইন চেক করে দেখা হোক সেই সব লেখা আছে কি না !
সম্পূর্ণ সন্দেহের উপর ভিত্তি করে আমাকে গ্রেফতার করে সাতকানিয়া থানা আমার বাসা থেকে । পরে থানায় নিয়ে গিয়ে আমার বিরুদ্ধে ৫৭ ধারায় মিথ্যা মামলা দেওয়া হয় । মামলার আগেই আমাকে গ্রেফতার করা হয় । গ্রেফতার করে ১৪ জুন আনুমানিক দুপুর ২ টায় আর মামলা দেয় ১৫ই জুন রাতে ।
আমি জানি না , মামলা হওয়ার আগে কাউকে গ্রেফতার করা যায় কি না ! তবে আমাকে মামলার আগেই গ্রেফতার করা হয়েছে ! আগে গ্রেফতার পরে মামলা !
ক্ষমতাধররা যদি আইনকে যেভাবে ইচ্ছা সেইভাবে ব্যবহার করে তাইলে নাগরিক তো নির্যাতিত হবেই । আমিই তার প্রকৃত উদাহারন ।
আমি ব্যক্তিগত ভাবে মুক্তিযুদ্ধের ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক চেতনা মনে প্রাণে বিশ্বাস করি এবং বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারন করি । আমি বিশ্বাস করি একাত্তরের ঘাতক দালাল রাজাকার যুদ্ধাপরাধী এবং তাদের দোসররা এই দেশের শত্রু । তাদের হাতে ক্ষমতা গেলে এই বাঙলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক চেতনা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হইবে ।
তাই আমি ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক চেতনার পক্ষে আর ঘাতক দালাল একাত্তরের পরাজিত শক্তি জামাতিদের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করি । যেখানে যেভাবে পারি ।
ধর্মান্ধ আর উগ্রবাদীদের নাম দিলাম , মৌলবাদ
পাল্টা জবাব দিলো আমাদের, তোরা নাস্তিক মুরতাদ ।
দেশে এখন অবস্থা এমন হয়েছে , ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক চেতনা এবং বাঙালি জাতির পিতার আদর্শ কায়েমে কোন কথা বললে , ধর্মান্ধ আর উগ্রবাদীদের বিরুদ্ধে কোন কিছু লিখলে তাকে নাস্তিক বলা হয় ।
অথচ চিন্তা করে দেখলে দেখা যায় , মুক্তিযুদ্ধের ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক চেতনা এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের প্রধান শত্রু ধর্মান্ধ আর ধর্মীয় উগ্রবাদীরা !
আমার মনে হয়, আমি জাতির পিতার রক্ত । তাই বাঙলাদেশের এতোটাই ভক্ত ।
তাই হয়ত আমার শত্রু বেশি !
আপসোস !
৫৭ ধারা বাতিল চাই । কোন ক্ষমতাধর ব্যাক্তি চাইলেই এই আইনে দেশের যেকোন অনলাইন এক্টিভিস্টকে ফাঁসাইতে পারবে । এই আইন যথেষ্ট অপব্যবহারের সুযোগ আছে ।

বৃহস্পতিবার, ১৮ মে, ২০১৭

সময়ের গল্প
-জিপসি রুদ্র ।

চরিত্র
 
মিউজিশিয়ান 
কবি, 
পলিটিশিয়ান
ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্মমেকার 
এবং 
একজন সুন্দরী মডেল।। 

দৃশ্যপট(১) 

দুই বন্ধু ছাদে বসে আছে। তাদের একজন গিটার হাতে টুংটাং করছে, আরেকজন বিয়ার খাচ্ছে। পাশে ছড়িয়ে থাকবে বেশ কয়েকটা বই, বিয়ারের ক্যান,চানাচুর, চিপস, ক্যামেরা, একটা ভাঙ্গা টুল, সিগারেটের প্যাকেট, এশট্রে এবং লাইটার।।

দৃশ্যপট (২) 

তিন নাম্বার বন্ধুর প্রবেশ। গিটার হাতে থাকা বন্ধুটি বলবে- কি রে পলিটিশিয়ান এতো দেরি? পলিটিশিয়ান বন্ধু হেঁটে আসতে আসতে বলবে- আর বলিস না! আসার সময় একজন ঘাতকদালাল জামাতিরে *** দিয়ে আসলাম! শালারা সুযোগ পাইলেই ধর্মের দোহাই দিয়ে আমাদের মুক্তিযুদ্ধরে ভইরা দেয়! সব শালা মাদারিচুদ ।- এই বলে সিগারেট ধরাবে! 

দৃশ্যপট (৩)

বিয়ার খেতে থাকা বন্ধুটি বলবে- তোরা শালা পড়ে রয়েছিস সেই একাত্তর থেকে জামাতিদের পিছনে। এরা এখন প্রায় মরা। তেতুলবাগী হেফাজতিদের দিকে একটু নজর দে! নইলে দেখবি এরা সবাই তেতুলবাগী হেফাজতিদের সাথে ভিড়ে গিয়ে শেখের বেটিরে গদি ছাড়া করবে। তখন বুঝবি দেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক চেতনার কী হাল হয়!! 

দৃশ্যপট (৪) 

পলিটিশিয়ান বন্ধু সিগারেট টানতে টানতে বলবে- এই দেশের নয়াপ্রজন্ম, দেশের জন্ম ইতিহাস জানে না!জন্মশত্রুদেরও চিনে না! আমরা পলিটিশিয়ানরা যদি নয়াপ্রজন্মের মগজে মননে বোধে দেশপ্রেম এবং মুক্তিযুদ্ধের ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক চেতনা ঢুকিয়ে দিতে না পারি, তাহলে এই দেশে মুক্তিযুদ্ধ বনাম ইসলামকে দাঁড় করিয়ে ফেলবে! তখন এই জাতি কাইন্দাও আর কুল পাবে না।মাইন্ড ইট। বিয়ার খেতে থাকা বন্ধুটি বলবে- এই জন্যেই কবি বলেছে... 

দৃশ্যপট (৫) 

প্রথম বন্ধু চেহারায় একটু বিরক্তি নিয়ে বলবে- আরে ব্যাটা তোর কবি কী বলেছে সেটা এখন ছাড়! পলিটিশিয়ান আর কবি এক সাথে হলেই ঝামেলা বাড়ে! তোরা শালা পুরোদমের ফাউল। ফাউল কথাবার্তা বন্ধ কর এখন! একটা সুর খুঁজে পাইছি তোরা শান্ত হইয়া বয়। আমি বাজিয়ে শোনাচ্ছি, তোরা শোন। পলিটিশিয়ান বন্ধু বসে পড়বে।ছেলেটি গিটার বাজাবে... 

দৃশ্যপট (৬) 

ঠিক এমন সময় ফ্রেমে ঢুকবে একটি মেয়ে, বলবে- পলিটিশিয়ান, কবি, মিউজিশিয়ান গোলহয়ে বসে কী করা হচ্ছে শুনি!? মিউজিশিয়ান উত্তর দিবে- একজন সুন্দরী মডেলের জন্য অপেক্ষা করছি!! মেয়েটি হেঁসে দিয়ে কবি'র পাশে গিয়ে বসতে বসতে বলবে- কিরে নতুন কোনো কবিতা লিখলি ? নাকি বিয়ার গিলতে গিলতে কবিতাও গুলে খেয়েছিস ? কবি বলবে- হে উর্বশী রমনী! ইদানীং কবিতা লিখতে পারছি না! শুধুই ভাবছি-কী লেখা যায়! পলিটিশিয়ান সিগারেট ফুকতে ফুকতে বলবে- হুম ভাবতে থাক, আর ভাবতে থাক! এই আধুনিক যুগে আসবে না কোন পয়গাম্বর আসবে না কোন দেবী! মানুষকে পথ দেখাবে শুধুই কবি! কবি বন্ধু বলবে- এই লাইন কবি রুদ্র শায়খের না? পলিটিশিয়ান বলবে- হুমমমম।। 

দৃশ্যপট (৭) 

মেয়েটি চানাচুর মুখে দিয়ে,মেঝেতে পড়ে থাকা বইটি হাতে নিয়ে খুলে দেখবে , আর বলবে- বইটি ভালো । আমি পড়েছি । মিউজিশিয়ান মাথা নেড়ে বলবে- হুম, ভালো। আমারও বেশ ভালো লেগেছে।। 

দৃশ্যপট (৮) 

এমন সময় ছাদের দরজা দিয়ে ঢুকবে পঞ্চম বন্ধু! তাকে দেখেই বিয়ার খাওয়া কবি বন্ধুটি উঠে দাঁড়িয়ে বলবে- হে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম মেকার! আমরা তো তোর জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। ফিল্মমেকার পলিটিশিয়ান বন্ধুর পাশে গিয়ে বসবে এবং বলবে- কেমন আছিস? পলিটিশিয়ান বলবে- তুই এমন একটি সিনেমা কবে বানাবি? যে সিনেমা দেখে নয়াপ্রজন্ম উগ্র দেশপ্রেম চর্চা করবে!? ফিল্মমেকার বলবে- বন্ধু, এই দেশকে উগ্রভাবে ভালবাসতেন শুধু একজনই। তিনি বলতেন, দুর্নীতিবাজ আর কালোবাজারিদেরকে খতম করতে হবে। তিনি বলতেন, আমার লোকের উপর যদি আর একটা গুলি চলে তাইলে তোমাদের প্রতি আমার অনুরোধ রইলো, তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো। এমন সময় মেয়েটি ফিল্মমেকারকে উদ্দেশ্য করে বলবে- দোস্ত, আমি সেই মহান লোকটারে চিনি। তিনি আমাদের জাতির পিতা! তখন মিউজিয়াশিয়ান গিটার বাজাতে বাজাতে গাইবে- "শোন একটি মুজিবরের কন্ঠস্বরের ধ্বনি প্রতিধ্বনি আকাশে বাতাসে উঠে রনি.. কবি বন্ধু বলবে- বাঙলাদেশ আমার বাঙলাদেশ।। 

দৃশ্যপট (৯) 

ফিল্মমেকার বলবে- একজন পলিটিশিয়ান একজন মিউজিশিয়ান একজন কবি এবং একজন স্মার্ট মডেল থাকলে আমার অবশ্যই একটা সেই লেভেলের ফিল্ম বানানো উচিত।যাতে সেই ফিল্ম দেখে মানুষ জয় বাঙলা স্লোগান দিতে দিতেই হল থেকে বের হবে। মেয়েটি উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলবে- দোস্ত, তোর সেই ফিল্মের নায়কের নায়িকা আমারেই বানাইছ। পলিটিশিয়ানের দিকে ইঙ্গিত করে মেয়েটি বলবে- চলো! পলিটিশিয়ান বাকি বন্ধুদের উদ্দেশ্য করে বলবে- তোরা থাক আমি গেলাম। কবি বন্ধু বলবে- ঠিক আছে মডেলরা, ব্যবসায়ী আর পলিটিশিয়ানদের সাথেই যায়, কবি আর মিউজিশিয়ানদের সাথে না! মেয়েটি বলবে- কবি তুই আসলেই সেরা! পরের বার তোর জন্য এককেইস বিয়ার নিয়ে আসবো! কবি বলবে- ওকে। পলিটিশিয়ান আর মেয়েটি বের হয়ে যাবে। 

দৃশ্যপট (১০) 

মিউজিশিয়ান ফিল্ম মেকার এবং কবি গোলহয়ে আডডায় বসে আছে! মিউজিয়াশান গিটারে "ধন ধান্য পুস্পে ভরা আমাদেরই বসুন্ধরা" গানটি টিউন করবে... ফিল্মমেকার ক্যামেরা নিয়ে ক্লিক করবে আর কবি এক হাতে বই অন্য হাতে বিয়ারের ক্যান নিয়ে নির্বাক চেয়ে রবে! ফ্লোরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রইবে বিয়ারের ক্যান,ম্যাচের কাটি,সিগারেটের প্যাকেট, সিগারেটের অবশিষ্টাংশ...