রবিবার, ২২ মে, ২০১৬

আদরের রাষ্ট্র আমার কথা একটু ভাবুন...

প্রেমিকার সাথে দেখা করতে চকবাজার যাচ্ছিলাম। রিকশা মহসিন কলেজের ক্যান্টিন বরাবর এলে টহল পুলিশ সিগন্যাল দেয়। আমি রিকশা থামাতে বলি।
চারজন পুলিশ চারদিক থেকে রিকশা ঘিরে ধরলো। একজন জানতে চাইলো, কি করেন? বললাম, লিখি, ছবি তুলি, শর্টফিল্ম বানাই আর একটা চাকরি করি।
আরেকজন পুলিশ বললো, গলায় আপনার গামছা কেনো? বললাম, এটি আমার দেশের শ্রমজীবী মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন।
(টহল অফিসারের প্রবেশ) অফিসার জানতে চাইলেন, মানে? বললাম, স্যার, আমার দেশের প্রত্যেক শ্রমজীবী মানুষ তাদের গায়ের ঘাম গামছা দিয়ে মুচে। আর এই শ্রমজীবী মানুষের ঘামে ঘুরছে আমার দেশের আয় উন্নতি। আমি’তো আর তাদেরকে জনে জনে গিয়ে বলতে পারবোনা, আমি তোমাকে সম্মান করি, আমি তোমাকে সম্মান করি… তাই আমি গামছাটা গলায় জড়িয়ে নিয়েছি। মানে আমি তোমাদের ঘাম আমার গায়ে মেখে নিলাম!
পাশ থেকে আরেকজন পুলিশ বললো, কথা কম শুনেন স্যার, ব্যাগ তল্লাশি করেন। আমি রিকশা থেকে নেমে গেলাম। বললাম, স্যার আপনারা চাইলে আমার সব কিছু তল্লাশি করতে পারেন। আমি আপনাদের সহযোগীতা করবো। আমি রাষ্ট্র বিরোধী কোন কাজের সাথে সম্পৃক্ত না। ব্যাগে আমার বই পুস্তক ও সিনেমার স্ক্রিপ্ট আছে।
পুলিশ বললো, কথা কম। ব্যাগ খুলেন। আমি ব্যাগের চেইন খুলে দিলাম। পুলিশ ব্যাগ থেকে কাগজ পত্র বের করে রিকশার সিটে রাখলেন। আরেকজন পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে। টহল অফিসার দাঁড়িয়ে দেখছেন আর ওয়াকিটকিতে কথা বলছেন।
তল্লাশিরত পুলিশ এবার ব্যাগ থেকে বের করলেন, কবি আলী প্রয়াসের বই, বুলেট ও বালক। পুলিশ জানতে চাইলেন, এই বইয়ের নাম এমন ক্যান? উত্তরে বললাম, স্যার বইটি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ভিত্তিক রচনা। খুবই ভালো বই। আপনি চাইলে বইটি পড়তে পারেন। পুলিশ বললো, বই পড়া আমার চাকরী না! আমি হতভম্ব হইলাম! বিচলিত হইলাম!
পুলিশ ব্যাগ থেকে আমার ফার্স্ট এইড বের কইরা চিল্লাইয়া উঠিয়া বললো, এই গুলো কি? আমি বললাম, স্যার ফার্স্ট এইড। কখন কই যাই না যাই ঠিকঠিকানা থাকে না! কাটা ছেঁড়া হইলে সাথে সাথে যেনো প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে পারি তাই এই সেভলন, গজ, ওয়ানটাইম ব্যান্ডেজ সাথে রাখি।
ঠিক এমন সময় আমার ব্যাগ থেকে বেড়িয়ে এলো ২০ থেকে ৩০ গ্রাম-এর মতো মারিজুয়ানা। খুবই অল্প। আট থেকে দশ ষ্টিক মতো হবে!
আমি সাথে সাথে বললাম অফিসার বরাবর তাকিয়ে, স্যার আমি নেশা করি। এটি আমাকে চিন্তা করার জন্যে খুবই সাহায্য করে। তবে এই নেশার এবিউস আমি করি না। নেশা কইরা স্যার আমি রাষ্ট্র বিরোধী কোন কাজ করি না। আমি নেশা করি কেবলমাত্র কনসান্ট্রেট থাকার জন্যে। অফিসার বললেন, আপনিতো সব কিছু বুঝেন আপনি কি এইটা বুঝছেন না, আপনি আইন অমান্য করেছেন?
আমি বললাম ইয়েস স্যার, আমি আইন অমান্য করেছি। এই জন্য আমি লজ্জিত এবং অনুতপ্ত! কিন্তু স্যার আমার কিচ্ছু করার নাই। সরকার মদের জন্যে লাইসেন্স দেয় কিন্তু মারিজুয়ানার জন্যে কোন লাইসেন্স দেয় না। এটা একেবারেই নিষিদ্ধ। তবে আমার ওয়ান লাইসেন্স আছে। অফিসার বললেন, পাওয়া গেছে এক আর লাইসেন্স দেখাইতাছেন আরেকটার! আমি বললাম, স্যার আমি বুঝাইতে চাইতেছি, উপায় নাই দেইখা আইন ভাঙছি।
ঠিক এই সময়, আমার গ্রামের এক রাজনৈতিক বড় ভাই, রফিক (এলাকার মাননীয় চেয়ারম্যান আক্তার হোসাইনের ছোট ভাই) রিকশাযোগে যাচ্ছিলেন, আমাকে পুলিশি তল্লাশিরত অবস্থায় দেখে রিকশা থামিয়ে কি হাল হকিকত দেখতে নামচে। পুলিশ তখন আমার ব্যাগ ছেড়ে আমার দেহ তল্লাশিতে ব্যস্ত।
আমি রফিক ভাইকে বললাম, ভাই ভালো আছেন? রফিক ভাই ভ্যাবাচ্যাকা খাইয়া কয়, কিরে বাপ্পী (আমার ডাক নাম) তোর কি হইছে? আমি কইলাম, ভাই নেশা লইয়া ধরা খাইছি! ভাই কয় তুই খাস ভালা কথা, ব্যাগে লইয়া গুরস ক্যান? আমি কই, সব সময় করা লাগে তাই ব্যাগে থাকে।
পাশের পুলিশ বললো অফিসারকে, স্যার ওহ ড্রাগস নে। আমি বললাম স্যার মারিজুয়ানা আর হুইস্কি ছাড়া আমি আর অন্য কোন নেশা করি না।
অফিসার বললেন, এইদিকে আসেন। আমি গাড়ির সামনে এগিয়ে গেলাম অফিসারের সাথে। অফিসারকে বলছি, স্যার আমি ড্রাগস নেওয়ার পর দেশীয় রাজনীতি শিল্প সাহিত্য সিনেমা এইসব নিয়া ভাবি। লেখালেখির সময় নেশা আমাকে খুবই সাহায্য করে। আমি নেশাকে এই যাবত কখনো কনোদিনও এবিউস করি নাই।
রফিক ভাই আর এক পুলিশ আড়ালে কথা বলছিলেন, অফিসার তাদের ডাকলেন, রফিক ভাই এসে পকেট থেকে টাকা বের করে পুলিশের পকেটে ঢুকিয়ে দিলেন। জিজ্ঞাস করলাম কতো টাকা দিয়েছে, রফিক ভাই বললো পাঁচশো।
ঠিক এমন সময় ফোন দিলো, প্রেমিকা। কই? আমি কইলাম, পুলিশি তল্লাশিতে। প্রেমিকা কয়, ধরা খাইছো? আমি কই, হুম। প্রেমিকা ধমকের সুরে কয়, ঠিক আছে ম্যানেজ কইরা আসো। আমার ক্ষিধা লাগছে! আমি কই, তুমি আমারে ছাড়াইতে আসবে না? সে কয়, তুমি নেশা নিয়া ধরা খাইছো আমি কোন দুঃখে পুলিশের কাছে মুখ বেঁচতে আসবো! নিজে ম্যানেজ করো! আমি কইলাম, আইচ্ছা। তুমি শান্ত থাইকো! অস্তির হইয়ো না! সে কয়, খাইয়া দাইয়া আর কাম নাই! তোমার জন্যে অস্থির হওয়ার। ম্যানেজ কইরা তাড়াতাড়ি আসো! আমি আইচ্ছা কইয়া লাইন কাইটা দিলাম। কি এক প্রেমিকা লইয়া জীবন চালাইতেছি…!
আরেক পুলিশ বললো, আরে ভাই ওরে থানায় নিয়া গেলে দশ হাজার টাকা লাগবে ছাড়াইতে । ডিউটিতে আরো পুলিশ আছে!
আমি আর দেরি না করে মানিব্যাগ বের করে পাঁচশো টাকার একটা নোট হাতে দিয়া দিলাম। তারপর বললাম, স্যার আমি কি এখন প্রেমিকার সাথে দেখা করবার জন্যে যাইতে পারি? স্যার বললেন, আরে ভাই আপনি শিল্প সাহিত্যের মানুষ নেশা আপনার করা লাগবেই। নইলে আপনি চিন্তা করতে পারবেন না। লিখতে পারবেন না। হাইসা হাইসা অফিসার কয়, মনে কইরেন না পুলিশ এতো বেরসিক- বইলা আমার গলার গামছার এক কোনায় নেশার প্যাকেটি (যে প্যাকেট নিয়ে এতো ক্যাচাল) বেঁধে দিলো। আর বললো ভালো থাকবেন। আমিও বললাম, ঠিক আছে স্যার ভালো থাকবেন।
বিদায় হওয়ার সময় রফিক ভাই’কে তার পাঁচশ টাকা ফেরত দিছি। এবং তার নাম্বারটা সংগ্রহ করে ফোন দিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বলছি, রফিক ভাই আপনি আমার জন্যে রাস্তায় গুনে গুনে ১৫ মিনিট সময় নষ্ট করেছেন, এই জন্যে আমি দুঃখিত। এবং লজ্জিত!
আর আপনি আমাকে যেভাবে সাহায্য করতে আগাইয়া আসছেন একেবারেই পথচারী হিসাবে তার জন্য আমি আপনার কাছে কৃতজ্ঞ।
সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ পোলাপাইন নেশা করবা না। নেশা করা খুব খারাপ। নেশা করলে মরবে। মাইন্ড ইট।