রবিবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৫

আমি , প্রেম , পোট্রেট আর বিশুদ্ধ প্রেমিকা !



বহু ধরনের প্রেমের অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে । একটা প্রেম আমাকে এখনো অনেক ভাবায় । তখন আমি স্টুডেন্ট  । আমার অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনের জন্যে পরিবারের সাথে আমার মনস্তাত্ত্বিক বেশ দূরত্ব তৈরি হয় । আমি চাই আমার মতো জীবন যাপন করতে তারা চায় আমার চিন্তাকে নিয়ন্ত্রন করতে । বিশ্বাস অবিশ্বাসের সংঘাত তৈরি হয় । (এটিকে কবি রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ দেখেছেন , এক জেনারেশনের সাথে আরেক জেনারেশনের চিন্তাগত দূরত্ব হিসাবে । যেমনটি আমার বাবার সাথে তার বাবার চিন্তাগত দূরত্ব ছিলো !) টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেয় পরিবার । ভীষণ অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে যায় আমার জীবন যাপন ।
ঠিক তখনই আমার এই প্রেমটি আমাকে শহরে থাকার মতো প্রতিমাসে অর্থের যোগান দিতে থাকে । আমি নির্ভর হয়ে পড়ি এই প্রেমের উপর । আমার মনে হতে থাকে এই প্রেম ছাড়া আমার বেঁচে থাকা অর্থহীন ।
প্রেমিকা শিক্ষিকা ছিলো । শিখিয়েছে অনেক কিছুই । বয়সে বেশ খানিকটা বড় ছিলো বলেই নিয়ন্ত্রন করতে পারতো আমায়। প্রেমিকার হাতে নিয়ন্ত্রিত হতে আমার বেশ ভালোই লাগতো । আমি নিয়ন্ত্রিত হতে চাইতাম প্রেমিকার ইচ্ছায় । আমাকে আমার প্রেমিকা নিয়ন্ত্রন করে – আহ ! কি এক ব্যাথা সুখের মতো বাজে !
এই প্রেমিকা আমাকে প্রেম শিখিয়েছে । দুপুরে ভাত খেতে গেছি নীলক্ষেতে , প্রেমিকা ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে বের করলো , একটা ছোট বাটি , খুলে দেখি ইলিশ মাছের ডিম ! ফোনে বলেছিলাম ইলিশ মাছের ডিম খেতে ভীষণ পছন্দ করি । তাই প্রেমিকা নিয়ে এসেছে ! আমি কোন কথা খাবার টেবিলে সেদিন বলতে পারি নি । নিশ্চুপ খেয়ে গেছি ! ঠুকঠাক এ কথা সেকথা সে বলেছে , আমি শুধু হ্যাঁ হু করেছি ! আমি ভাবছিলাম, এই মেয়েটি আমার মতো অনার্সের স্টুডেন্ট পড়ায় ! আর সে কিনা আমার প্রেমে পড়েছে ! আমি সেইদিনই বুঝতে পেরেছিলাম, চিন্তায় কাছাকাছি হলে বয়স কোন সমস্যাই না ! আমরা বেশ পড়তে পারি একজন আরেকজনকে ।
বিকালে ক্লান্ত হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে প্রেমিকা’কে বললাম, খুব ক্ষিধা পেয়েছে , প্রেমিকা হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো সিঁড়িতে । খুব যত্নে পরিস্কার করলো সিঁড়ি । দুজন ঘন হয়ে বসলাম । প্রেমিকা ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে ছোট একটি বাটি করে আমার হাতে দিলো, আমি খুলে দেখি , পায়েস ! সাথে একটা চোট চামচ !
আমি প্রথম আবেগি হয়েছিলাম সেইদিন ! আমি প্রেমিকার দিকে তাকিয়ে আছি ! প্রেমিকা পানির বোতল বের করতে করেত বলে, দেখো পায়েসটা ঠিক আছে কি না ! অনেকদিন পায়েসের গল্প শুনিয়েছি তোমায় ,এবার খাও ! অনেক যত্নে বানিয়েছি ! আমার হৃদপিণ্ড সেদিন ভীষণ কেঁপেছিলো ! আমি তেমন কোন কথা বলতে পারি নি ! চুপচাপ পায়েশ খেয়েছি ! আর প্রেমিকার দিকে নিশ্চুপ চেয়ে থেকেছি !
শিল্পি সঞ্চয়ের আঁকা এই প্রেমিকার একটি পোর্টট্রেট আমার বেডরুমে আছে । একটা সময় ছিলো আমি নিয়মিত এই পোর্টট্রেটের সাথে কথা বলতাম ! মনে হতো এইতো ঠোঁট নড়ছে ! আমার পাগলামি দেখে মুচকি মুচকি হাসছে ! আমি বেশ আবেগতাড়িত হয়ে নিয়মিত চুমু খেতাম ! এই প্রেমটি হারানোর পর আমি প্রথমবার বুঝতে পেরেছিলাম , প্রিয়জন হারানোর দহন কেমন ! কেমন একটা হৃদয় পোড়া গন্ধ নাকে লাগতো সব সময় !
প্রেমিকা হারানোর পর অনেকবার চেয়েছি পোর্টট্রেট’টি পানিতে ভাসিয়ে দিই ! কর্ণফুলী নদিতে ! প্রেমিকার সলিল সমাধি রচনা হবে ! পরক্ষনেই মনে হয়েছে , না ! আমি এমন অমানবিক প্রেমিক হতে পারবো না ! আমি মানবিক । আমার মানবতা আছে । প্রেমিকা হারানোর ক্ষোভে আমি তার পোর্টট্রেট নদীতে ভাসিয়ে দিতে পারি না ! আবার মনে হয়েছে, তাহলে বরং মেয়েটির ঠিকানায় পাঠিয়ে দিই ! পরক্ষনেই মনে হয়েছে, যেই প্রেম আমাকে  ঠিকে থাকার জন্যে অর্থের যোগান দিয়েছে , আমার প্রিয় ইলিশ মাছের ডিম বাসা থেকে রান্না করে নিয়ে এসে দুপুরে খাইয়েছে, আমার অতি প্রিয় পায়েশ নিজ হাতে বানিয়ে এনে আমাকে খেতে দিয়েছে সেই প্রেমিকার পোর্টট্রেট আমি নিজের কাছে সারাজীবন না রেখে পাঠিয়ে দিবো ! এটা বেশ অসম্মানিয় ! আমি প্রেমিকা’কে অসম্মান করতে পারবো না ! এমন সাহস দিয়ে আমাকে পাঠানো হয়নি !
আমি সিদ্ধান্ত নিলাম । তার প্রতি আমার প্রেম মরে যাক ! শিল্প বেঁচে থাক । এখন এই পোর্টট্রেট’টি আমার কাছে স্রেফ একটা শিল্পকর্ম । আমি এখন এই পোর্টট্রেট’টির সামনে দাঁড়ায় না ! মিছে মিছে বানিয়ে গল্প বলি না ! ঠোঁটের উপর আলতো করে চুমুও খাই না ! পোর্টট্রেট’টিও আগের মতো ঠোঁট নাড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসে না ! আমার হারানো প্রেমিকার এই পোর্টট্রেট’টি এখন আমার বেডরুমে হারানো প্রেমের একটা শিল্পকর্ম ছাড়া অন্য কিছুই নয় ।
আমার বিশুদ্ধ প্রেমিকা’কে সেইদিন বলেছিলাম , বাবুনি ! ভাবছি পোর্টট্রে’টি এখান থেকে সরি ফেলবো ! সে মুচকি হেসে বলল, থাকুক না এখানে ! আমার কাছে এটা স্রেফ একটা শিল্পকর্ম ! এটি আমার দেখতে ভালোই লাগে !
বিশুদ্ধ প্রেমিকার কথা শুনে আমি সেদিন ভেবেছিলাম, আমি শালার হেব্বি হ্যাপি আছি ! হারানো প্রেমিকার প্রেমময় শিল্প আর বিশুদ্ধ প্রেমিকার প্রেম নিয়ে...

সোমবার, ১০ আগস্ট, ২০১৫

বিশুদ্ধ প্রেমিকার অত্যাচারে আমি অসহায়...! পর্ব-১

বিশুদ্ধ প্রেমিকা ফোন দিয়ে জিগাইল, বাবু কই? উত্তরে কইলাম, বাসায় । কি করো ? কইলাম, নেশা করি ! এই নেশা করা ছাড়া তোমার আর কোন কাজ নাই ? কইলাম , আপাতত নাই ! তাইলে সোনা তোমাকে একটা কাজ দিই ? সেটা আমি কইলেও দিবা না কইলেও দিবা !হুদাই জিগাইয়া লাভ কি ! কি কাজ দিবা বইলা ফালাও ! বিশুদ্ধ প্রেমিকা একটুখানি হাসিয়া কহিল, বাবু তুমি কথা বেশি বল... শোনো, আমি বাড়ি থেকে বের হইছি , কাছাকাছি এসে তোমাকে ফোন দিলে তুমি বাস কাউন্টারে এসে আমাকে নিয়ে যেও । (আমি ক্ষেপে গিয়ে) কইলাম, অই তুই আমারে ভোদাই পাইছস ! আমি পারুম না ! তুই বাড়ি থেকে একা এতোটুকু পথ আসতে পারলি আর কাউন্টার থেকে বাসায় আসতে পারবি না ! ইয়ার্কি মারার জায়গা পাস না !এই ফালতু কাজ আমি করতে পারুম না ! (বিশুদ্ধ প্রেমিকা একটু ঢং কইরা) ওহ বাবু ! এমন করো ক্যান ! তোমারে ছাড়া রিকশায় একা বসতে আমার ভালো লাগে না ! পাশে ফাঁকা ফাঁকা লাগে ! ওহ সোনা অমন কইরো না ! আইসো হ্যাঁ ! কইলাম , আইচ্ছা ! ( ইশ ! অমন প্রেম এড়িয়ে চলার ক্ষমতা আমাকে দেওয়া হয় নি !)
দাঁড়িয়ে আছি কাউন্টারে । প্রেমিকা এখনো আসে নি । বলল , পাঁচ মিনিট মতো লাগবে । আমি প্রতিক্ষা করছি ,ইশ! বিশুদ্ধ প্রেমিকা বাড়ি থেকে আসবে আমি আবার রিকশায় হাত ধরে প্রেম করবো । এলোমেলো ভাবে ঘুরবো । ট্রাফিক সিগন্যালে রিকশা থেমে গেলে সে হুট করে একটা চুমু দিয়ে আশে পাশের সবাইকে কিংকর্তব্যবিমুট করে দিবে ! মানুষ এখনো প্রেমিক প্রেমিকার চুমুর সৌন্দর্য বুঝতে শিখেনি ! আর আমি তার মাথার চুলে নাক ডুবিয়ে শ্যাম্পুর ঘ্রান নিবো !
এরই মধ্যে একটা গাড়ি এসে থামল । এই গাড়িতেই আমার প্রেমিকা আছে । তাই গাড়ির দরজায় চোখ স্থির করে রেখেছি । বাবু...বাবু... ডাকে আমার ঘোর কাটলো, অই তুমি ওখানে দাঁড়িয়ে আছো ক্যান! গাড়িতে এসে আমার চালের ব্যাগ তরকারির ব্যাগ কে নামাবে ! হুম । আমি ব্যাগগুলো নিতে নিতে বললাম, অই তুই কি আমারে প্রেম করার জন্যে ডেকেছিস নাকি কুলি গিরি করার জন্যে ডেকেছিস ! হারামজাদি ! ফালতু ! আমি রাগে গরগর করছি আর সে মুচকি একটা হাসি দিয়ে ড্যাং ড্যাং করে আমার পাশ ঘেঁসে গাড়ি থেকে নেমে গেলো ! আর আমি ভোদাই হয়ে দুই হাতে দুইটা বস্তা নিয়ে তার পিছে পিছে হাঁটছি... কি বিচ্চিরি দৃশ্য মাইরি...!

আহ কি অসহায় মৃত্যুর পরেও...! / জিপসি রুদ্র

আমি আর বিশুদ্ধ প্রেমিকা এক সাথে থাকি। প্রায় চার বছর ধরে। আমরা ভালোবাসি, আমরা প্রেম করি, আমরা জ্যোৎস্না মাখি, আমরা দেহ বিনিময় করি একজন আরেকজনের সাথে।
আবার আমাদের মন না চাইলে আমরা আলাদা আলাদা থাকি। সে তার জায়গায়। আমি আমার বাসায়। আমাদের সম্পর্কে বিবেদ নাই, বিদ্বেষ নাই, আছে শুধু সতেজ সজীব সবুজ ভালোবাসা!
আমাদের এই চার বছরের সম্পর্কে একটু একটু করে জমা হয়েছে কতো স্মৃতি কতো গল্প তা শুধু আমরাই জানি। আর কেউই জানে না।
নিলয়ের হত্যাকান্ডের পর আশা মনিকে জড়িয়ে যে সব কথা বাতাসে চাউর হইছে তা শুনে আমি তো বেশ স্তম্ভিত! আমি এখন আরো বেশি অসহায় বোধ করছি!
আমাকে যদি কেউ বাসায় এসে অথবা রাস্তায় খুন করে চলে যায় , আমার বিশুদ্ধ প্রেমিকা কী আদালতে আমার খুনের বিচার চাইতে পারবে না? আমার প্রেমিকা কী মামলা করতে পারবে না? সে বলবে যাকে খুন করা হয়েছে, সে আমার প্রেমিক। জিপসি রুদ্র। তাকে আমার সামনেই খুন করা হয়েছে। আমি দেখেছি। আমরা দুজন প্রেম করছিলাম এমন সময় অতর্কিত এসে দুজন আমাকে আটকে রাখে বাকি দুজন আমার প্রেমিকের উপর চাপাতি দিয়ে কোপাতে থাকে। অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণে আমার প্রেমিক আমার আদরের বয়ফ্রেন্ড আমার চোখের সামনেই মারা যায়। আমি তার চাক্ষুস সাক্ষী। মাননীয় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দয়া করে আপনি এখন আসামিদের গ্রেপ্তারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করেন। পুলিশ কী মামলা নিবে না? নাকি বলবে নিকট আত্বীয় ছাড়া এসব মামলা করা যাবে না? আচ্ছা আমার বিশুদ্ধ প্রেমিকা কি আমার নিকট আত্বীয় নয়? এই মেয়েটি শহরে না থাকলে এই শহরে আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে । আমার নিশ্বাস নিতে ভীষন কষ্ট হয়। আমার অস্তিত্ব সংকট দেখা দেয়। আমার গোটা পৃথিবী থেমে যায়। অথচ সে আমার খুনের বিচার চেয়ে মামলা করতে পারবে না! সবাই বলবে, তাকে মারলো তোমাকে মারলো না কেনো? তুমি যদি এতোই তার পেয়ারি প্রেমিকা হও তাহলে দুই এক কোপ তোমার গায়েও তো পরতে পারতো! পড়লো না কেনো?
আচ্ছা আমার পরিবার কী জানে, আমি লিভ টু গেদার করি? আমি খুন হওয়ার পরে সবাই যখন জানতে চাইবে, জিপসি রুদ্র একটি মেয়েকে নিয়ে এক সাথে থাকতো , আপনারা জানতেন? মেয়েটা বলছে , সে জিপসি রুদ্রের বিশুদ্ধ প্রেমিকা! আমার মা কি উত্তর দিবে? ধর্মপ্রাণ আমার মা কী বলবে, হুম। আমি জানতাম। নাকি সামাজিকতার হাত থেকে বাঁচতে বলবে, অই মেয়েটিই আমার একমাত্র আদরের পুত্রের খুনি। নইলে সে কেমনে অক্ষত থাকে?
খুনিরা তাকে কোপ দেয়নি এটিই তার মানে আমার বিশুদ্ধ প্রেমিকার অপরাধ হয়ে যাবে? ক্যান ভালোবেসে কেউ চাইলে এক সাথে থাকতে পারবে না? রাষ্ট্রের কাছে এর ব্যাখ্যা কি?
আমি ভীষন অসহায় বোধ করি। আমাকে কেউ খুন করে ফেলে রাখলেও ন্যায় বিচার পাবে না! আহ! স্বাধীন রাষ্ট্রের মানুষ আমি! জন্ম আমার সার্থক! সালাম হে আমার বন্গ জননী !