বৃহস্পতিবার, ১৮ মে, ২০১৭

সময়ের গল্প
-জিপসি রুদ্র ।

চরিত্র
 
মিউজিশিয়ান 
কবি, 
পলিটিশিয়ান
ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্মমেকার 
এবং 
একজন সুন্দরী মডেল।। 

দৃশ্যপট(১) 

দুই বন্ধু ছাদে বসে আছে। তাদের একজন গিটার হাতে টুংটাং করছে, আরেকজন বিয়ার খাচ্ছে। পাশে ছড়িয়ে থাকবে বেশ কয়েকটা বই, বিয়ারের ক্যান,চানাচুর, চিপস, ক্যামেরা, একটা ভাঙ্গা টুল, সিগারেটের প্যাকেট, এশট্রে এবং লাইটার।।

দৃশ্যপট (২) 

তিন নাম্বার বন্ধুর প্রবেশ। গিটার হাতে থাকা বন্ধুটি বলবে- কি রে পলিটিশিয়ান এতো দেরি? পলিটিশিয়ান বন্ধু হেঁটে আসতে আসতে বলবে- আর বলিস না! আসার সময় একজন ঘাতকদালাল জামাতিরে *** দিয়ে আসলাম! শালারা সুযোগ পাইলেই ধর্মের দোহাই দিয়ে আমাদের মুক্তিযুদ্ধরে ভইরা দেয়! সব শালা মাদারিচুদ ।- এই বলে সিগারেট ধরাবে! 

দৃশ্যপট (৩)

বিয়ার খেতে থাকা বন্ধুটি বলবে- তোরা শালা পড়ে রয়েছিস সেই একাত্তর থেকে জামাতিদের পিছনে। এরা এখন প্রায় মরা। তেতুলবাগী হেফাজতিদের দিকে একটু নজর দে! নইলে দেখবি এরা সবাই তেতুলবাগী হেফাজতিদের সাথে ভিড়ে গিয়ে শেখের বেটিরে গদি ছাড়া করবে। তখন বুঝবি দেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক চেতনার কী হাল হয়!! 

দৃশ্যপট (৪) 

পলিটিশিয়ান বন্ধু সিগারেট টানতে টানতে বলবে- এই দেশের নয়াপ্রজন্ম, দেশের জন্ম ইতিহাস জানে না!জন্মশত্রুদেরও চিনে না! আমরা পলিটিশিয়ানরা যদি নয়াপ্রজন্মের মগজে মননে বোধে দেশপ্রেম এবং মুক্তিযুদ্ধের ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক চেতনা ঢুকিয়ে দিতে না পারি, তাহলে এই দেশে মুক্তিযুদ্ধ বনাম ইসলামকে দাঁড় করিয়ে ফেলবে! তখন এই জাতি কাইন্দাও আর কুল পাবে না।মাইন্ড ইট। বিয়ার খেতে থাকা বন্ধুটি বলবে- এই জন্যেই কবি বলেছে... 

দৃশ্যপট (৫) 

প্রথম বন্ধু চেহারায় একটু বিরক্তি নিয়ে বলবে- আরে ব্যাটা তোর কবি কী বলেছে সেটা এখন ছাড়! পলিটিশিয়ান আর কবি এক সাথে হলেই ঝামেলা বাড়ে! তোরা শালা পুরোদমের ফাউল। ফাউল কথাবার্তা বন্ধ কর এখন! একটা সুর খুঁজে পাইছি তোরা শান্ত হইয়া বয়। আমি বাজিয়ে শোনাচ্ছি, তোরা শোন। পলিটিশিয়ান বন্ধু বসে পড়বে।ছেলেটি গিটার বাজাবে... 

দৃশ্যপট (৬) 

ঠিক এমন সময় ফ্রেমে ঢুকবে একটি মেয়ে, বলবে- পলিটিশিয়ান, কবি, মিউজিশিয়ান গোলহয়ে বসে কী করা হচ্ছে শুনি!? মিউজিশিয়ান উত্তর দিবে- একজন সুন্দরী মডেলের জন্য অপেক্ষা করছি!! মেয়েটি হেঁসে দিয়ে কবি'র পাশে গিয়ে বসতে বসতে বলবে- কিরে নতুন কোনো কবিতা লিখলি ? নাকি বিয়ার গিলতে গিলতে কবিতাও গুলে খেয়েছিস ? কবি বলবে- হে উর্বশী রমনী! ইদানীং কবিতা লিখতে পারছি না! শুধুই ভাবছি-কী লেখা যায়! পলিটিশিয়ান সিগারেট ফুকতে ফুকতে বলবে- হুম ভাবতে থাক, আর ভাবতে থাক! এই আধুনিক যুগে আসবে না কোন পয়গাম্বর আসবে না কোন দেবী! মানুষকে পথ দেখাবে শুধুই কবি! কবি বন্ধু বলবে- এই লাইন কবি রুদ্র শায়খের না? পলিটিশিয়ান বলবে- হুমমমম।। 

দৃশ্যপট (৭) 

মেয়েটি চানাচুর মুখে দিয়ে,মেঝেতে পড়ে থাকা বইটি হাতে নিয়ে খুলে দেখবে , আর বলবে- বইটি ভালো । আমি পড়েছি । মিউজিশিয়ান মাথা নেড়ে বলবে- হুম, ভালো। আমারও বেশ ভালো লেগেছে।। 

দৃশ্যপট (৮) 

এমন সময় ছাদের দরজা দিয়ে ঢুকবে পঞ্চম বন্ধু! তাকে দেখেই বিয়ার খাওয়া কবি বন্ধুটি উঠে দাঁড়িয়ে বলবে- হে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম মেকার! আমরা তো তোর জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। ফিল্মমেকার পলিটিশিয়ান বন্ধুর পাশে গিয়ে বসবে এবং বলবে- কেমন আছিস? পলিটিশিয়ান বলবে- তুই এমন একটি সিনেমা কবে বানাবি? যে সিনেমা দেখে নয়াপ্রজন্ম উগ্র দেশপ্রেম চর্চা করবে!? ফিল্মমেকার বলবে- বন্ধু, এই দেশকে উগ্রভাবে ভালবাসতেন শুধু একজনই। তিনি বলতেন, দুর্নীতিবাজ আর কালোবাজারিদেরকে খতম করতে হবে। তিনি বলতেন, আমার লোকের উপর যদি আর একটা গুলি চলে তাইলে তোমাদের প্রতি আমার অনুরোধ রইলো, তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো। এমন সময় মেয়েটি ফিল্মমেকারকে উদ্দেশ্য করে বলবে- দোস্ত, আমি সেই মহান লোকটারে চিনি। তিনি আমাদের জাতির পিতা! তখন মিউজিয়াশিয়ান গিটার বাজাতে বাজাতে গাইবে- "শোন একটি মুজিবরের কন্ঠস্বরের ধ্বনি প্রতিধ্বনি আকাশে বাতাসে উঠে রনি.. কবি বন্ধু বলবে- বাঙলাদেশ আমার বাঙলাদেশ।। 

দৃশ্যপট (৯) 

ফিল্মমেকার বলবে- একজন পলিটিশিয়ান একজন মিউজিশিয়ান একজন কবি এবং একজন স্মার্ট মডেল থাকলে আমার অবশ্যই একটা সেই লেভেলের ফিল্ম বানানো উচিত।যাতে সেই ফিল্ম দেখে মানুষ জয় বাঙলা স্লোগান দিতে দিতেই হল থেকে বের হবে। মেয়েটি উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলবে- দোস্ত, তোর সেই ফিল্মের নায়কের নায়িকা আমারেই বানাইছ। পলিটিশিয়ানের দিকে ইঙ্গিত করে মেয়েটি বলবে- চলো! পলিটিশিয়ান বাকি বন্ধুদের উদ্দেশ্য করে বলবে- তোরা থাক আমি গেলাম। কবি বন্ধু বলবে- ঠিক আছে মডেলরা, ব্যবসায়ী আর পলিটিশিয়ানদের সাথেই যায়, কবি আর মিউজিশিয়ানদের সাথে না! মেয়েটি বলবে- কবি তুই আসলেই সেরা! পরের বার তোর জন্য এককেইস বিয়ার নিয়ে আসবো! কবি বলবে- ওকে। পলিটিশিয়ান আর মেয়েটি বের হয়ে যাবে। 

দৃশ্যপট (১০) 

মিউজিশিয়ান ফিল্ম মেকার এবং কবি গোলহয়ে আডডায় বসে আছে! মিউজিয়াশান গিটারে "ধন ধান্য পুস্পে ভরা আমাদেরই বসুন্ধরা" গানটি টিউন করবে... ফিল্মমেকার ক্যামেরা নিয়ে ক্লিক করবে আর কবি এক হাতে বই অন্য হাতে বিয়ারের ক্যান নিয়ে নির্বাক চেয়ে রবে! ফ্লোরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রইবে বিয়ারের ক্যান,ম্যাচের কাটি,সিগারেটের প্যাকেট, সিগারেটের অবশিষ্টাংশ...