বৃহস্পতিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৭

বন্ধু হিন্দুও হলেও ভালোবাসবো শত্রু মুসলমান হলেও ঘৃণা করবো ।

খালেদা জিয়া তার নেতা কর্মী এবং সমর্থকদের নির্দেশ দিয়েছে , তারা যেনো আর ভারতের প্রতি বিদ্বেষমূলক বক্তব্য না দেয় এবং এইদেশে ভারতের প্রতি বিদ্বেষ না ছড়ায় ।

আমার কাছে মনে হয়েছে , খালেদা জিয়া নীতি, সততা, কৃতজ্ঞতা এবং আদর্শের উপর ভিত্তি করে বিএনপির নেতা কর্মী এবং সমর্থকদের এই নির্দেশ দে নাই । এই নির্দেশ দিয়েছে একটা কৌশলগত কারনে । খালেদা জিয়া মনে করে , এই বাঙলাদেশে ভারতের ইশারা ছাড়া সরকার পরিবর্তন হয়না । বিএনপির নেতা কর্মীরা যদি এই মুহুর্তে ভারতের প্রতি বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দেয় তাহলে আগামী নির্বাচনে ভারত বিএনপি’কে সাহায্য সহযোগিতা করবে না । তাই খালেদা জিয়া বিএনপির নেতা কর্মী সমর্থকদেরকে কৌশলগত কারনে ভারতের প্রতি বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দিতে নিষেধ করেছে ।

এই বাঙলাদেশে ভারতের প্রতি বিদ্বেষমূলক কথাবার্তা যারা বলে তাদেরকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় । তাদের এক ভাগ মনে করে , ভারত হিন্দু রাষ্ট্র আর বাঙলাদেশ মুসলমান রাষ্ট্র । একজন মুসলমান হয়ে একটি হিন্দু রাষ্ট্রকে কোন ভাবেই সমর্থন করা যায় না । তাই তারা শুধুমাত্র ধর্মীয় গোঁড়াময় আবেগ অনুভুতি থেকে ভারতের প্রতি বিদ্বেষমূলক কথাবার্তা বলে । আরেকভাগ মনে করে , ভারত বাঙলাদেশের ব্যবসা বানিজ্য, শিল্প সাহিত্য, মানুষের আচার আচরণসহ সংস্কৃতির সকল শাখায় আগ্রাসন চালাচ্ছে । তাই তারা ভারতের প্রতি বিদ্বেষমূলক কথাবার্তা বলে ।

কিন্তু এই দুই ভাগের একভাগও মনে রাখে নাই , বাঙলাদেশের জন্মযুদ্ধে ভারতের অবদান । ভারত বাঙলাদেশের জন্য কি কি করেছে । পৃথিবীর একটি দেশ আরেকটি দেশের স্বাধীনতা এনে দেওয়ার জন্য এতো ত্যাগ স্বীকার করেছে কি না আমার জানা নাই ভারতের মতো । এক কোটি মানুষকে থাকতে দিছে । নয় মাস ধরে খাওয়াইছে । চিকিৎসা দিছে । মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র দিছে । গোলাবারুদ দিছে । ট্রেনিং দিছে । বাঙলার মানষের মুক্তির জন্য ভারতের প্রায় চারহাজার সন্য জীবন দিছে এবং আন্তর্জাতিক ভাবে পাকিস্তানের উপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য ইন্দিরাগান্ধী বিশ্বসফর করছে । বাঙলাদেশের জন্মযুদ্ধে ভারত যে মানবিকতা এবং বন্ধুর পরিচয় দিছে এই দেশের জনগনের প্রতি তা একজন বাঙালি হয়ে অস্বীকার করলে নিশ্চয় বাঙালির ইজ্জত বাড়বে না !

জন্মযুদ্ধে পরাজিত হওয়া শক্তি ঘাতক দালাল রাজাকার যুদ্ধাপরাধী জামাতিরা ভারতের এই সাহায্য সহযোগিতা মেনে নিতে পারে নাই । তাই তারা একাত্তরেও এই দেশে অপপ্রচার চালাইছিলো পাকিস্তানীদের পক্ষ হয়ে । তারা বলতো, পাকিস্তান মুসলমান রাষ্ট্র এবং বাঙালিদের বেশির ভাগও মুসলমান । ভাইয়ে ভাইয়ে যুদ্ধ করার কোন দরকার নাই । দেশ স্বাধীন হওয়ারও কোন দরকার নাই । যারা দেশের স্বাধীনতা চায়, যারা দেশ ভাগ চায় তারা ভারতের দালাল তারা মুসলমান না । আর ভারতের দালাল মানে হিন্দুদের দালাল ।

ঘাতক দালাল রাজাকার যুদ্ধাপরাধীদের এই যে দেশপ্রেমহীন ধর্মীয় গোঁড়াময় অপরাজনীতি তা তারা স্বাধীনতা পরবর্তী ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক বাঙলাদেশেও ছড়িয়ে দিচ্ছে । তারা ভারতের প্রতি বিদ্বেষ ছড়িয়ে এই দেশের মানুষের ভেতর পাকিস্তানের প্রতি প্রেম ভালোবাসা জাগিয়ে তুলতে চায় । জন্ম দিতে চায় ধর্মভিত্তিক পশ্চাৎপদ একটি রাষ্ট্রের । আর তাতে পানি দিচ্ছে এই দেশের বিএনপি ।

এইদেশে বিএনপি হলো জন্মযুদ্ধে পরাজিত শক্তি ঘাতক দালাল রাজাকার যুদ্ধাপরাধী জামাতিদের রক্ষাকবচ । তাই বিএনপি জামাতিদের পক্ষ হয়ে জামাতিদের ফায়দা দেওয়ার জন্য এই দেশে ভারত বিদ্বেষ ছড়িয়ে হিন্দু মুসলমান ইস্যুটিকে জিইয়ে রাখে । এই বিএনপির জন্যই মুক্তিযুদ্ধের ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাঙলাদেশ গড়া সম্ভব হচ্ছে না ।

বন্ধু হিন্দুও হলেও ভালোবাসবো
শত্রু মুসলমান হলেও ঘৃণা করবো ।
ভারত হিন্দু হলেও বাঙলাদেশের বন্ধু
পাকিস্তান মুসলমান হলেও বাঙলাদেশের শত্রু ।
ভারতকে ভালোবাসি
পাকিস্তানকে ঘৃণা করি ।

জয় বাঙলা ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন